নরসিংদী জেলা এবং জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সগুলো যাচ্ছে ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকায়। অ্যাম্বুলেন্সের এই বাড়তি ভাড়া কেন? বাড়তি টাকা যাচ্ছে কোথায়?
প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বসবাসস্থল নরসিংদী জেলা। ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আর ১শ শয্যার একমাত্র জেলা হাসপাতালেই চালাতে হয় চিকিৎসা সেবা। রোগী বেড়ে গেলে নিতে হয় রাজধানীর বড় হাসপাতালে। তবে এসবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অ্যাম্বুলেন্স।
জেলা সদর থেকে ঢাকা মেডিকেল পর্যন্ত সরকারি নির্ধারিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া গড়ে ১২০০ টাকা। অথচ বাস্তবে সেই পথ পাড়ি দিতে গুনতে হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকা, কখনো পাঁচ হাজারও। জরুরি মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্স পাবেন না এমন শঙ্কায় ক্যামেরার সামনে অভিযোগ করতেও অস্বীকৃতি জানায় ভুক্তভোগীরা।
একজন জানান, আসা ও যাওয়ার ভাড়া যদি ১৫০০ টাকাও করা হয় তাহলে মানুষ যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। আরেকজন বলেন, চার হাজার বা পাঁচ হাজার হোক যেতে তো হবেই। রোগী নিয়ে কি বসে থাকা যাবে?
জেলায় সচল সরকারি অ্যাম্বুলেন্স মাত্র ৬টি কিন্তু সে তুলনায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স আছে ৬০টির বেশি। তাই নিরুপায় রোগীরা ভরসা রাখেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর, যা হয়ে উঠেছে ভোগান্তির নাম।
সরকারি হিসেবে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ধরা হয়েছে ১০ টাকা। নরসিংদী থেকে ঢাকার দূরত্ব ৫৭ কিলোমিটার হওয়ায় সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়ার কথা ১২০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে গুনতে হচ্ছে তার দ্বিগুণেরও বেশি।
বাড়তি ভাড়ার কথা স্বীকার করে চালক ও মালিকরাও। উল্টো তাদের অভিযোগ, নানা খাতে ঘুষ ও চাঁদা দিতে গিয়ে চাপ বাড়ছে রোগীদের ওপর।
এক চালক জানান, চাকা কিনতে হয়, ব্যাটারি কিনতে হয়, রাস্তায় লিক মেরামত করতে হয়। আরেকজন জানান, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে কিছু খরচ তহবিল থেকে দেয়া হয়। আমাদের খরচ তো পুরোটাই আমাদের রোগীর কাছ থেকে নিতে হয়।
তবে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের খরচ কম কিভাবে, সেই প্রশ্নে জবাব নেই কারও কাছে। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ বাড়তি টাকা রোগীদের জন্য ভোগান্তি বলছেন সিভিল সার্জন।
নরসিংদী সিভিল সার্জন আমিরুল হক শামিম বলেন, ‘কোনো অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার যদি এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি করে তাহলে ওই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হবে, ডিসিকে জানানো হবে। ওখানে মোবাইল কোর্ট হবে, এগুলো আইনগত ব্যবস্থা।’
জরুরি সেবার নামে ভাড়া বাণিজ্য যেন আর না হয় এবং সরকারি সেবার পাশাপাশি বেসরকারি সেবাগুলোও হবে নিয়মের মধ্যে এটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।