অভাবে আটকে ছিল কৃষক নেন্দু শেখের চোখের চিকিৎসা

মানিকগঞ্জ
লায়ন্স ক্লাব অফ ঢাকা রজনীগন্ধার আয়োজনে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প
এখন জনপদে
0

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের ৮০ বছর বয়সী কৃষক নেন্দু শেখ দীর্ঘ সাত বছর ধরে চোখের ঝাপসা সমস্যায় ভুগলেও কখনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হননি। অর্থনৈতিক সংকট এবং সচেতনতার অভাবে করাতে পারেননি চোখের চিকিৎসা। ধরে নিয়েছিলেন, বয়স বাড়লে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক।

লায়ন্স ক্লাব অফ ঢাকা রজনীগন্ধা আজ (শুক্রবার, ২৩ মে) আয়োজনে গড়পাড়া দিঘী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে। সেখানে গিয়ে নেন্দু শেখ জানতে পারেন, তার চোখে ছানি পড়েছে।

সেখানে উপস্থিত চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানান, অপারেশনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব। ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে বিনামূল্যে অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ ও অপারেশনের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আবেগে কাঁপা কণ্ঠে নেন্দু শেখ বলেন, ‘চোখে ঝাপসা দেখতাম, ভাবতাম বয়সের জন্যই বুঝি। আজ ডাক্তার বললো অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে। ক্লাবের লোকজনও বললো ওরা ব্যবস্থা করে দেবে। আল্লাহ রহমত করেছে আজ।’

এই ক্যাম্পে নেন্দু শেখের মতো আরও প্রায় ৩০০ দরিদ্র নারী-পুরুষ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। ৪ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও চোখের পরীক্ষা করেন।

ঘোনা গ্রামের রোকেয়া বেগম (৬৮) জানান, ‘অনেকদিন ধইরা শরীর খারাপ লাগতো। আজকে জানলাম আমার ডায়াবেটিস আছে। তারা পরামর্শ দিয়েছে, ওষুধও দিয়েছে। এই ক্যাম্পটা না থাকলে জানতেই পারতাম না।’

দিনমজুর সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চোখে অনেকদিন ধরে ঝাপসা দেখতেছিলাম। ভাবতাম ময়লা পড়ছে বা চোখ শুকাইয়া গেছে। আজকে ডাক্তার বললো ছানি হইছে। তারা অপারেশনের ব্যবস্থা করতেছে। এই বয়সে অন্ধ হইয়া যাইতাম, আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক।’

স্থানীয় কামরান আহমেদ সাদ্দাম জানান, ‘এই রকম আয়োজন খুব দরকার। গ্রামের মানুষ অনেক সময় অসুখ নিয়েই পড়ে থাকে। সচেতনতার অভাব যেমন আছে, তেমনি অর্থনৈতিক সমস্যাও বড় বাঁধা। এলাকার অনেক মানুষ এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’

লায়ন্স ক্লাব অফ ঢাকা রজনীগন্ধার জোন চেয়ারপার্সন লায়ন ইঞ্জিনিয়ার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, স্বাস্থ্যসেবা মৌলিক অধিকার। গ্রামে দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারে না। আমরা চেয়েছি অন্তত একদিনের জন্য হলেও তাদের বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে। চোখ, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়।’

লায়ন্স ক্লাবের জেলা গভর্নর লায়ন মো. হানিফ বলেন, ‘আজকের ক্যাম্পে প্রায় ৩০০ জন মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকেই জানতেন না তাদের চোখে ছানি পড়েছে বা সুগার লেভেল অনেক বেশি। আমরা তাদের সচেতন করেছি, ওষুধ ও চশমা দিয়েছি এবং যাদের অপারেশন প্রয়োজন, তাদের তালিকা করেছি। সেই অনুযায়ী বিনামূল্যে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।’

এই ক্যাম্পের মাধ্যমে একদিনের জন্য হলেও গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের মুখে যেন ফিরেছে স্বস্তির হাসি। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতেও এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

এসএইচ