কক্সবাজারে গোপনে চাষ হচ্ছে ‘ভেনামি চিংড়ি’

কক্সবাজার
ভেনামি চিংড়ি
এখন জনপদে
0

কক্সবাজারে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই গোপনে চাষ হচ্ছে ভেনামি চিংড়ির পোনা। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত গড়ে উঠেছে অনেক চিংড়ি হ্যাচারি। এতে রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছেন বৈধ হ্যাচারি শিল্প ও সাধারণ খামারিরা। দেশে ভেনামি চিংড়ির পোনা উৎপাদনের অনুমতি আছে শুধু কক্সবাজারের নিরিবিলি ও খুলনার দেশ বাংলা হ্যাচারির।

সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বাজারে ভেনামি চিংড়ির পোনা বিক্রি করছে মায়ের দোয়া হ্যাচারি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ সরকারি তালিকায় মায়ের দোয়া নামে কোনো হ্যাচারির অস্তিত্ব নেই। জানা যায়, জালিয়াপালং ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা এমকেএ হ্যাচারিতে মায়ের দোয়া হ্যাচারির নামে পোনা উৎপাদন করছে।

জানতে চাইলে জালিয়াপালং ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য অস্বীকার করেন। এদিকে, পোনা উৎপাদনের কথা অস্বীকার করলেও ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনের অনুমতি চেয়ে আবেদনের কথা জানায় এমকেএ হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ আছে, বাগদা মা চিংড়ির আড়ালে বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে ভেনামি চিংড়ি। যা দিয়ে পোনা উৎপাদন করে বিক্রি করা হয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার।

পোনা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীরের কাছে মুঠোফোনে ভেনামি চিংড়ি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন নেই। ৫/১০ দিন আগে ছিলো।’

শ্রীম্প মাদার ট্রেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ ভুলু চৌধুরী বলেন, ‘উনারা কোনো কোনো হ্যাচারীতে এগুলো প্রোডাকশন করছে। অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও এগুলা মার্কেটিং করছে৷’

শ্রীম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘পারমিশন না থাকা সত্ত্বেও বেনামি প্রোডাকশন করছে এবং অন্য একটা ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে চালাচ্ছে৷’

এমকেএ হ্যাচারির হিসাব ব্যবস্থাপক রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ইন্ডিয়া থেকে নফলি নিয়ে আসে তারা, আমরা কথা প্রসঙ্গে শুনি। এখন চাপে পড়ে আমাদের দোষ দিচ্ছে।’

অবৈধ রেনু উৎপাদনের কথা জানে জেলা মৎস্য কর্মকর্তারাও। আশ্বাস দেন ব্যবস্থা নেয়ার। এভাবে অনুমোদন ছাড়া পোনা উৎপাদনের কারণে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চিংড়ি শিল্প।

ভেনামি চিংড়ি মূলত উচ্চফলনশীল। ইংরেজি নাম ‘হোয়াইটলেগ শ্রিম্প’ বা সাদা পায়ের চিংড়ি। দেখতে কিছুটা সাদাটে। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে উৎপাদিত চিংড়ির ৮০ শতাংশই এই জাতের। রোগ প্রতিরোধে ভালো ক্ষমতা থাকলেও খাদ্যাভ্যাস ও আবহাওয়া বিবেচনায় এটি চাষের ঝুঁকি একটু বেশি। ভেনামি চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে পানি ও বর্জ্য শোধন; ভৌত অবকাঠামোর বিচ্ছিন্নতা, বায়ু সঞ্চালন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, রোগের তথ্য সংরক্ষণ, খাদ্য প্রয়োগ বিষয়ে নজরদারি প্রয়োজন।

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের চাষিরা এই চিংড়ি চাষের আবেদন করতে পারেন। তবে খামারিদের অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা আবশ্যক। অনুমোদনে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত ছকে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর উপজেলা মৎস্য দপ্তর সরেজমিনে পরিদর্শন করে ১৫ দিনের মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে সুস্পষ্ট মতামত জানাবে।

ভেনামি চাষের অনুমতি পাওয়ার পরও বেশ কিছু বিধিনিষেধ মানতে হবে, অন্যথায় চাষের অনুমোদন বাতিল করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে অনুমোদিত খামারের নির্বাচিত স্থানের বাইরে ভেনামি চিংড়ি চাষ না করা এবং অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো পর্যায়ে এ চিংড়ি স্থানান্তর না করা। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা ১৫ দিন বয়সের চিংড়ি পোনা ও ব্রুড চিংড়ি অনুমতিপত্রে উল্লেখিত খামার ছাড়া অন্য কোথাও সরবরাহ না করার ব্যাপারেও বিধিনিষেধ রয়েছে।

ইএ