‘নারিকেল জিঞ্জিরার’ নারিকেল এখন শুধুই স্মৃতি

সেন্টমার্টিন দ্বীপ
এখন জনপদে
0

কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন, একসময় পরিচিত ছিল ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামে। সারি সারি গাছে শত শত নারিকেল; যা শুধু সৌন্দর্যই নয়, দ্বীপের অর্থনীতিরও বড় ভরসা ছিল। কিন্তু সেই নারিকেল এখন শুধুই স্মৃতি। কয়েকবছর ধরে ফলন না থাকায় বিপাকে চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, পোকার আক্রমণ আর অবহেলাতেই এমন অবস্থা।

প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে কেউ ডাকেন ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামে। এক সময় এ দ্বীপের প্রতিটি কোণেই চোখে পড়তো নারিকেল গাছের সারি। স্থানীয়দের মতে, একসময় জেলেরা ক্লান্তি দূর ও পানির জোগান মেটাতেই এখানে লাগিয়েছিল গাছ। সময়ের সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ে সেই চাষ। আর দ্বীপ পরিচিতি পায় ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামে। কিন্তু এখন সেই প্রাচুর্য আর নেই। গত তিন বছর ধরে ৮০ শতাংশ গাছেই নেই কোনো ফলন। যেখানে একেকটি গাছ দিতো ২০০-৩০০টি নারিকেল বা ডাব, এখন গড়ে মিলছে ২০-৩০টি।

স্থানীয়রা জানান, সাদা এক ধরনের পোকার কারণে এখন গাছে ফল আসে না আগের মত। আগে আমরা ১০০ বা ২০০ এমন করে ডাব নামিয়েছি। ক্ষেত্রবিশেষে ৪০০ বা ৫০০ ও হয়েছে। অথচ এখন ১ টা ২ টা, ৫টা, ৬টা এমন করে আসে। গত তিন চার বছরে অল্প অল্প করে ধরলেও এখন তো একবারেই নেই।

কৃষি বিভাগের হিসাব বলছে, ৫ বছর আগেও দ্বীপে ছিল ১৫ হাজার ফলনশীল গাছ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজারে। এর মধ্যে নতুন রোপণ হয়েছে ২ হাজার গাছ।

দ্বীপের বেশিরভাগ গাছের বয়স ৫০-৬০ বছরের বেশি। পুরনো গাছ, নিয়মিত পরিচর্যা হয় না। সার বা কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে।

এদিকে ‘রোগোস হোয়াইট ফ্লাই’ নামে এক ধরনের সাদা মাছি গাছে আক্রমণ চালাচ্ছে। দুইয়ে মিলে বন্ধ হয়ে গেছে ফলন। কৃষকদের নেই স্প্রে মেশিন কিংবা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। সরকার থেকেও মেলে না পর্যাপ্ত সহায়তা।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামানিক বলেন, বয়স্ক গাছগুলোতে ফল খুব কম। নেই বললেই চলে। এর পেছনে কারণ হিসেবে আমরা সরাসরি যা দেখলাম তা হলো এক ধরনের পোকার আক্রমণ। যা রোগোস হোয়াইট ফ্লাই নামে পরিচিত। এগুলো পাতার রস শুষে খেয়ে নেয়, যার ফলে গাছে ফটোসেন্টিস না হওয়ার কারণে গাছ দুর্বল হয়ে ফল ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে।’

কিছুদিন আগেও দ্বীপের নারিকেল যেত কক্সবাজার, এমনকি চট্টগ্রামেও। এখন স্থানীয় চাহিদা মেটানোই কষ্টকর। বাজারে নারিকেলের দাম বাড়লেও, চাষিরা পাচ্ছেন না লাভ। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে হারিয়ে যাবে নারিকেল, হারিয়ে যাবে দ্বীপের ঐতিহ্যও।

ইএ