জাপানি নাগরিকদের দীর্ঘায়ু লাভ করা নিয়ে রয়েছে জগতজোড়া কৌতূহল। কেননা তৃপ্ততার সঙ্গে লম্বা সময় বেঁচে থাকাই যে সবার মূখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু কীভাবে আর কোন উপায়ে মিলে এমন জীবনপ্রাপ্তি?— এ প্রশ্নের উত্তর হলো ইকিগাই। মূলত এটির ওপর ভর করেই জাপানিদের দৈনন্দিন ছুটেচলা। তবে এ ইকিগাই বিষয়টি আসলে কী?
ইকিগাই একটি জাপানি ধারণা, যার অর্থ ব্যস্ততার আনন্দ বা জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া। জাপানিরা নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের পাশাপাশি এটি ধারণও করে। কারণ এটি তাদের প্রতিদিনের কাজকে অর্থবহ করে তোলে।
বিশেষ করে দেশটির ওয়াকিনাওয়া অঞ্চলের প্রায় সবাই এটি মেনে চলে। আর তাই সেখানকার প্রতি ১ লাখের মধ্যে অন্তত আড়াই হাজার মানুষের বয়স একশোর ওপরে, যা পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি অঞ্চলটিতে শতবর্ষী নারী-পুরুষ নিয়মিত মাঠের কাজেও যায়।
কারও ইকিগাই হলো গান করা, কারও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, কারও ইকিগাই আবার বাগান করা। তবে এরও রয়েছে বেশকিছু নিয়ম। যেখানে অবসরের পরিবর্তে সর্বদা সক্রিয় থাকতে হয়। কাজ চালিয়ে যেতে হবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
জাপানের বাসিন্দারা মনে করেন, মানুষ বয়সের ভারে নয়, মনের ভারে নুইয়ে পড়ে। আর তাই বার্ধক্য দূরে রাখতে প্রয়োজন মানসিক কসরত। বয়স বাড়ছে এমন চিন্তা পাশ কাটিয়ে চলার অন্যতম উপায় ইকিগাই।
যেখানে করতে হবে মননশীলতার চর্চা। অন্যদিকে ‘মোয়াই’ ইকিগাইয়ের একটি অংশ, যার অর্থ একই চিন্তাধারার মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে চলা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা। এটিও দীর্ঘ জীবন পেতে সহায়ক।
ইকিগাইয়ের আরও একটি ধারণা হলো, জাপানিরা মনে করেন পেটভর্তি করে খাওয়া যাবেনা। পাকস্থলীর ৮০ ভাগ পর্যন্ত খেয়ে টেবিল ছাড়তে হবে।
দেশটির বেশিরভাগ বাসিন্দা এ নিয়মটি মেনে দীর্ঘ জীবন লাভ করছে। পাশাপাশি অস্থিরতা পরিহার করে ধীরস্থির থাকা এবং সুযোগ পেলেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়াও এ ধারণারই একটি অংশ।
অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা সুখী জীবনপ্রাপ্তির অন্তরায়। বলা হয় বন্ধু ছাড়া জীবন অসম্ভব। এমনকি দীর্ঘায়ু লাভে সঠিক বন্ধুদের বেশ গুরুত্ব দেয় জাপানিরা। যাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় জীবন হয়ে ওঠে আরও রঙিন।
এছাড়াও ইকিগাই বলছে দীর্ঘ জীবন পেতে পরিমিত হাসির বিকল্প নেই, যত বেশি হাসি তত বেশি আয়ু। সেই সঙ্গে, স্বল্পমাত্রায় চাপও নিতে হবে। কেননা, চাপমুক্ত জীবন বড্ড একঘেয়েমি।
জীবনের গোলকধাঁধা থেকে অব্যাহতির সঠিক পথ জীবনকে করে তোলে প্রাণবন্ত। নিজেদের ইকিগাই খুঁজে পেতে তাই মরিয়া জাপানের দীর্ঘায়ু প্রত্যাশীরা।