পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত

বিদ্যালয় ভবন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষা
এখন জনপদে
0

শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত ফরিদপুরের পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলের শিশুরা। স্কুল থাকলেও নেই সঠিক পরিবেশ, নেই শিক্ষকের নিয়মিত উপস্থিতি। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরোতেই হোঁচট খাচ্ছে চরের ছেলে-মেয়েরা।

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন আর সদর উপজেলার পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা এখনও মৌলিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নেই ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, দুর্লভ স্বাস্থ্যসেবা আর শিক্ষাব্যবস্থাও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

চর হরিরামপুর ইউনিয়নের চর শালেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা ১১টায় দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছে, অথচ তখনও স্কুলে উপস্থিত হননি কোন শিক্ষক। অন্যদিকে সালেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র দুইজন শিক্ষক দুই ক্লাসের পাঠদান করছেন, আর শিক্ষার্থী তিন থেকে চারজন। এমন চিত্র চরাঞ্চল জুড়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই।

বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি হয়ে স্কুলগুলো বন্ধ থাকে মাসের পর মাস। আর শুকনো মৌসুমে নানা অজুহাতে অনুপস্থিত থাকেন শিক্ষকরা। অনেক সময় পড়ালেখার বদলে অভিভাবকের সঙ্গে ক্ষেতে কিংবা মাছ ধরার কাজ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর সন্তানেরা। শুধু শিক্ষা নয়, এই দুর্গম চরে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাও। আকস্মিক অসুস্থতা বা দুর্ঘটনায় এখানকার মানুষ প্রায়ই হয়ে পড়েন অসহায়।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কোনো নিয়মকানুন নেই। একজন আসলে তিনজন আসে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘বর্ষাকালে যখন পানিতে সব তলিয়ে যায় তখন পানি থাকার কারণে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না।’

চরাঞ্চলের অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা আর দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে সন্তানদের পড়ালেখায় অভিভাবকরা খুব একটা আগ্রহ দেখান না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আমাদের নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে আসতে সমস্যা হয়। সেজন্য পাঠদানে বিঘ্ন ঘটে।’

অন্য একজন বলেন, ‘একেবারে রিমোট এরিয়া। আসা যাওয়া একটু অসুবিধা। কখনও নৌকা ঠিকমতো পাওয়া যায় না ঘাটে। এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। তখন হয়তো দুই একদিন উপস্থিত থাকতে পারি। এর বাইরে কিছু না।’

এ ছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাসহ নানা কারণে চরাঞ্চলে পাঠদানে আগ্রহী হোন না অনেক শিক্ষক। তবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা অধিদপ্তর।

ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাহউদ্দিন বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে, স্কুলের জায়গা পরিবর্তন করার কারণে কিছু ফ্যাসিলিটিস অপ্রতুল থাকায় আমাদের নারী শিক্ষকরা চরে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। যেহেতু আমাদের বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সুবিধা, পয়:নিষ্কাশন সুবিধা কম থাকায় বিদ্যালয় এলাকা দুর্গম হওয়ায় আমাদের শিক্ষকদের হোম ভিজিটটাও দুর্গম হয়। শিক্ষকরা বাইরে হওয়ায় হোম ভিজিট দুর্গম হয়। এজন্য চরাঞ্চলের কিছু কিছু বিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।’

এসএস