ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন; চাল সংগ্রহেও সন্তোষজনক অগ্রগতি

আশুগঞ্জের মেঘনা তীরে শতবর্ষী ধানের ঘাট
কৃষি
এখন জনপদে
0

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই থেকে কৃষকদের কাছ লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ধান সংগ্রহ করেছে জেলা খাদ্য বিভাগ। এছাড়া চাল সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। এবারে তুলনামূলক দাম বেশি হওয়ায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে খাদ্যগুদামে ধান ও চাল সরবরাহ করছেন কৃষক ও চালকল মালিকরা। যদিও ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাজারে। তাই গুদামে চাল সরবরাহে বাড়তি প্রণোদনা দেয়ার দাবি তাদের।

আশুগঞ্জের মেঘনা তীরের শতবর্ষী এই ধানের ঘাট ঘিরে জেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় আড়াইশো চালকল। যার ফলে ধান-চাল সংগ্রহে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারের বরাদ্দও বেশি। প্রতি মৌসুমেই চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ হয় এখান থেকে।

তবে বাজারদরের তুলনায় সরকারিভাবে ধানের দাম কম হওয়ার ফলে গেল কয়েকবছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। এছাড়া লোকসানের অজুহাতে চুক্তি করেও সমপরিমাণ চাল দিতে পারে না অনেক চালকল। গেলবছর বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার ১৩ হাজার ৪০১ টন ধানের বিপরীতে সংগ্রহ হয় ১৩ হাজার ৫৭ টন এবং ৭০ হাজার ৭৭৮ টন বরাদ্দের বিপরীতে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয় ৬৪ হাজার ৮৪৯ টন। আর আমন মৌসুমে ৩ হাজার ৭৪৭ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয় মাত্র ৪৪৪ টন। আর ২৪ হাজার ৫৬৮ টন সিদ্ধ চালের বিপরীতে সংগ্রহ হয় ২২ হাজার ৫৩১ টন।

তবে চলতি বোরো সংগ্রহের মেয়াদ আরও ১ মাসেরও বেশি সময় বাকি থাকতেই কৃষকের কাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রার ১৪ হাজার ১২৬ টন ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৬০ হাজার ১১৪ টন- যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৭ শতাংশ।

মূলত ধানের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি সরকারিভাবে নির্ধারণ করা ৩৬ টাকা কেজি দরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গুদামে ধান দিয়েছেন কৃষকরা। তবে চাল সংগ্রহে ৪৯ টাকা কেজি নির্ধারণ হলেও বাজারে ধানের দরের ঊর্ধ্বগতির কারণে চুক্তির সব চাল সরবরাহে প্রণোদনা দেয়ার দাবি চালকল মালিকদের।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘অন্যান্য বছর ছিলো ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা। বর্তমানে কুরার দাম চলে এসেছে ১২০০ টাকায়। এজন্য আমাদের মিলগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে। যেহেতু আমরা সরকারি চালের জন্য চুক্তি করেছি তাই এটা লস হলেও বিগত দিনে আমরা সরকারকে বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এ বছর যে অবস্থা তাতে কুরার দাম যদি না কমে তাহলে বুঝতে পারছি না কি করবো।’

তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্যমাত্রার অবশিষ্ট চাল সংগ্রহের আশা খাদ্য বিভাগের। আর কোনো চালকল মালিক চুক্তির সমপরিমাণ চাল না দিতে পারলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান এই কর্মকর্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য বিভাগের খাদ্য পরিদর্শক মো. রামিম পাঠান বলেন, ‘কৃষকদের সুবিধার কথা ভেবে আমরা এবার ধানের অগ্রাধিকার দিয়েছি। আমাদের খাদ্য বিভাগ থেকে ধান সংগ্রহের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমরা শতভাগ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছি। আশা করি আমাদের চালের যে লক্ষ্যমাত্রা তা আমরা সময়ের আগেই পূরণ করতে পারবো। যদি এর মধ্যে কোনো মিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিতে না পারে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া বোরো সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে আগামী ৩১ আগস্ট। এবার চাল সংগ্রহে জেলার ১০২টি মিলের সঙ্গে চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ।

ইএ