‘আমরা একসঙ্গে কেন মরলাম না’, বিমান বিধ্বস্তে নিহত উক্যচিংয়ের মায়ের বিলাপ

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত উক্যচিং মারমার মরদেহ পৌঁছেছে নিজ বাড়িতে
এখন জনপদে
0

'আমার বুকের ধন একলা মরলো কেন? আমরা একসঙ্গে কেন মরলাম না। মৃত্যুর আগে বার বার আমাকে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু দেখা হলো না। আমরা বুকের ধন এখন আর দেখা হবে না।’— মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে এমন বিলাপে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তেজিপ্রু মারমা।

ঘড়ির কাটা তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স এসে কেবল পৌঁছেছে বাড়ির আঙিনায়। গাড়ি থেকে নেমেই স্বজনদের জড়িয়ে ধরে এক মায়ের গগনবিদারী আহাজারি। হতবিহ্বল স্বজনেরাও শামিল হন সে কান্নায়। ক্ষণে ক্ষণে সে বিলাপ অন্যদেরও অশ্রুফোটা হয়ে তপ্ত সড়কে আছড়ে পড়ছে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া কলেজপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে নিহত হওয়া ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী উক্যচিং মারমা এ এলাকার উসাই মং মারমা ও তেজিপ্রু মারমা শিক্ষক দম্পতির একমাত্র সন্তান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে তার মরদেহ আনা হয়ে। আজ (বুধবার, ২৩ জুলাই) বিকেল তিনটায় দাহক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে নিহতের স্বজনেরা নিশ্চিত করেছেন।

ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ জনবহুল ঢাকা শহরের বাইরে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা। দুর্ঘটনায় আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও নিহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকারকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি নিহতের স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সোমবার মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় একমাত্র সন্তান উক্যচিং মারমা দগ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে যান এ শিক্ষক দম্পতি। পরে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রাত আড়াইটার দিকে উক্যচিং মারমা মারা গেলে তাকে বাড়িতে আনা হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তার মরদেহ বাঙ্গালহালিয়ার কলেজপাড়া এলাকায় আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকা দূরদূরান্ত থেকে আসা স্বজন, প্রতিবেশী, পরিচিত জনেরা এক নজর দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

স্বজনদের একজন মানুচিং মারমা বলেন, ‘এটা কি জানা ছিলো না এদের। ত্রুটিপূর্ণ বিমান নিয়ে এভাবে ছেড়ে দেওয়া এটা কি আদৌও উচিত? এটা তো আসলে সচেতন হওয়া দরকার। এটাকে দায়িত্বে অবহেলা বলবো। পাইলটের প্রাণ ঝড়ে গেলো। সেই সঙ্গে এতগুলো ছোট বাচ্চার প্রাণ ঝড়ে যাওয়া এটাতো কারো কাম্য হতে পারে না। আমরা হতাহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

উক্যচিংয়ের বাবা উসাইমং মারমা রাজস্থলী উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। আর মা তেজিপ্রু মারমা বান্দরবানের রুমা উপজেলা ক্যটেইন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন।

নিজের একমাত্র নাতির আকস্মিক এ মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার দাদা কংলাপ্রু মারমা।

তিনি বলেন, ‘আগেই খবর পেয়েছিলাম যে, একশো ভাগ পুড়ে গেছে। নাতি বাঁচবে না। বড় ডাক্তার বলেছে। মেয়ে জামাই ফোন করে জানিয়েছে। দোয়া করতে বলেছে। ভোর তিনটায় ফোন করে বলেছে -তোমার নাতি নাই। মরে গেছে। শুনেই বুকটা ভেঙে গেছে।’

বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান জনবহুল ঢাকা শহরে প্রশিক্ষণ না দেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নিহতের পিতা উসাই মং মারমা।

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি থাকবে যে, ঢাকা শহর একটা জনবহুল শহর। ওখানে বিল্ডিংয়ের যে অবকাঠামো দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানগুলো ঢাকা শহরের উপরে প্রশিক্ষণ না দিলেই ভালো হবে। সে দৃষ্টি যাতে সরকারের নজরে আসে। সে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আমি আহবান জানাবো।’

এসএইচ