মনিরুল-কল্পনা দম্পতি। সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়ায় গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে সেবা নেন হাসপাতাল গেটের নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরও শারীরিক উন্নতি না হওয়ায় আবার এসে দেখেন তাদের সেবা দেয়া ব্যক্তিকে ভুয়া চিকিৎসক বলে আটক করেছে সেনাবাহিনী।
কল্পনা বলেন, ‘প্রথমে আমরা জিয়া মেডিকেলে আসছিলাম, পরে সেখানে একজন লোক আমাদের এই জায়গা নিয়ে এসেছিল। আপনারা বলছেন ভুয়া ডাক্তার, আমি তো আর জানি না যে ভুয়া ডাক্তার।’
এভাবেই চলছে জেলা শহরের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা অসংখ্য ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। একই অবস্থা উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।
গাবতলী উপজেলা সদরে একটি ক্লিনিকের অনুমোদন থাকলেও বন্ধু কল্যাণ ডায়াগনস্টিক, অক্সিজেন হেলথ কেয়ারসহ চলছে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
অক্সিজেন হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপক নুর আলম বলেন, ‘উনারা (কর্তৃপক্ষ) ভিজিট করে গেছে। তারপর আর কোনো গুরুত্ব দেয়নি।’
সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই চলছে অনুমোদনহীন হাসু মণ্ডল ডায়াগনস্টিক ও আলোকিত ডায়াগনস্টিক।
সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মুদি দোকানের মতো চলছে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হলেও সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সোনালী হাসি কমিউনিটি হসপিটাল।
সোনালী হাসি কমিউনিটি হসপিটালের একজন নার্স বলেন, ‘এখানে মেডিসিনের রোগীসহ, অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন, সিজার সব করা হয়।’
বগুড়ার সোনাতলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শারমিন কবিরাজ বলেন, ‘সোনাতলা উপজেলায় সর্বমোট ১৮টি ক্লিনিক আছে। এর মধ্যে ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্সপ্রাপ্ত। তার আবার অধিকাংশরই নবায়ন নাই।’
স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেও বছরের পর বছর একইভাবে চলছে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকগুলো। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন সিভিল সার্জন।
বগুড়ার সিভিল সার্জন এ. কে. এম মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, ‘যেগুলো অনিবন্ধিত আছে, আসলে এগুলোর তথ্য আমাদের কাছে থাকে না। যদি এগুলোর ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করে, কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসে তাহলে অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবো। তাদের লাইসেন্স না থাকলে আমরা অবশ্যই তাদের শাটডাউন করে দেবো।’
এই ক্লিনিকগুলোর মতো অসংখ্য ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক গড়ে উঠেছে বগুড়া জেলাজুড়ে। সেসবের কোনো তালিকা নেই সরকারি কোনো দপ্তরেই। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চললেও কারও নজরেই আসছে না। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা আর সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি সবার।