চ্যালেঞ্জ জয় করে রাজশাহীতে সফলতা অর্জন নারী উদ্যোক্তাদের

রাজশাহী
কারখানায় পোশাক তৈরি করছেন একজন নারী
অর্থনীতি
এখন জনপদে
0

নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে রাজশাহীতে সফলতা পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি কেউ আবার সৃষ্টি করেছেন অন্যদের কর্মসংস্থানও। তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি নানান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তারা। সেসব চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে অনেকেই হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা, দেখিয়েছেন নতুন সম্ভাবনা। সরকারি সহায়তার আশা নারী উদ্যোক্তাদের।

অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে যেসব নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন তাদেরই একজন রাজশাহীর নীলুফা ইয়াসমিন। ২০০১ সালে মাত্র ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি নীলুফাকে। ২০০৬ সালে গড়ে তোলেন ৩টি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেখানে ৩ হাজার মানুষের কাজের সুযোগ মিলেছে। নানা বাধায়ও পিছু হটেননি তিনি।

রাজশাহীর নারী উদ্যোক্তা নীলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি ২৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। আমরা এ ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০১ সালে। আমি পাশাপাশি আরও দুইটা ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। আমার নীলাঞ্জনা নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে যেখান থেকে আমি রিটেইল সেল করি।’

নীলুফা ইয়াসমিনের মতো অনেকই ঘরে বসে এখন তৈরি করছেন হাতে বানানো পণ্য, তৈরি পোশাক কিংবা স্থানীয় খাবার। কেউ আবার করছেন নার্সারি । দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব পণ্য সরবরাহ করে বেশ ভালো রোজগার করছেন।

স্থানীয় একজন নারী উদ্যোক্তা জানান, ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি অনলাইনে গাছ বিক্রি করে থাকেন। এতে তার বেচাকেনা ভালো চলছে বলে জানান তিনি।

স্বামীর অসুস্থতার কারণে থমকে যাওয়া পরিবারকে এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন আরেক নারী ফারহানা।

ফারহানা জানান, তার স্বামী ২০১৯ সালে সৌদি আরবে ব্রেন স্ট্রোক করে। এরপর থেকেই তার স্বামী কাজ করতে পারেন না। এ অবস্থায় ফারহানা ব্যবসা শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

তবে সম্ভাবনার এ যাত্রাপথে রয়েছে চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা। রয়েছে পরিবার ও সমাজের রক্ষণশীলতা, পুঁজি সংকট, ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণের অভাব। সেই সঙ্গে সরকারি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেক উদ্যোক্তা।

নারী উদ্যোক্তারা জানান, সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়না। ব্যাংক থেকে নিতে গেলেও সুদের পরিমাণ এত বেশি যে তাদের পক্ষে সেটা নেয়া সম্ভব হয়না। বর্তমান ব্যবস্থায় নারীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা খুবই কঠিন। কিন্তু চেম্বারের সহায়তায় তারা এ জায়গা থেক ওঠে এসেছে বলেও জানান নারী উদ্যোক্তারা।

আর নারী উদ্যোক্তাদের স্বনির্ভর হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র ঋণ ও বাজারজাতকরণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রোজিটি নাজনীন ।

রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রোজিটি নাজনীন বলেন, ‘নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা সবসময় স্বাগতম জানাই। আমাদের রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। এ চেম্বারে আমরা তাদের সদস্য করে নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। ঋণ কাভার করে দিই যাতে ঋণটা তারা পায়।’

বিশেষ গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেয়ার পরামর্শ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ও উপ-উপাচার্য ড. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যদি সহায়তা করা হয় সেক্ষেত্রে নারীরা আরও বেশি উৎসাহিত হবে। আরও বেশি তারা উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত হবে।’

ইএ