৯৪ দিন পর কাপ্তাই হ্রদ উন্মুক্ত; জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ

নিষেধাজ্ঞা শেষে কাপ্তাই হ্রদে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ
এখন জনপদে
1

মাছের প্রজনন মৌসুমে টানা ৯৪ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল শনিবার (২ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাতে কাপ্তাই হ্রদ খুলে দেয়া হয়েছে মাছ শিকারের জন্য। প্রথম দিনেই জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়েছে মাছ। এসব মাছ আনা হচ্ছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) চারটি অবতরণ কেন্দ্রে।

সেখান থেকে পরিমাপ ও শুল্কায়ন শেষে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের নানা প্রান্তে। আরও কয়েক দিন জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন জেলেরা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ মিঠা পানির কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের আয়তন ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার। দেশের অন্যতম প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র কাপ্তাই হ্রদ আয়তনের বিচারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মোট জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ।

প্রজনন মৌসুমে গেলো ১ মে থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে সব প্রকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। 

শনিবার মধ্যরাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে হ্রদের নিবন্ধিত ২৭ হাজার জেলে পরিবারে। হ্রদ খুলে দেওয়ার প্রথম দিনেই জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়েছে মাছ।

আজ (রোববার, ৩ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই, মারিশ্যা ও মহলাছড়ি এ চারটি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে আসতে থাকে ইঞ্জিন নৌকা বোঝাই মাছ। সেখান থেকে পরিমাপ ও শুল্কায়ন শেষে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের নানা প্রান্তে। 

তবে এসব মাছের মধ্যে চাপিলা আর কেচকিই বেশি। মাছগুলোর আকার বেশ ছোট হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিনে মাছ পেয়ে বেশ খুশি মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেরা।

আরও পড়ুন:

মৎস্য ব্যবসায়ী আলী আকবর বলেন, ‘যদি আরও ১৫ দিন পরে হ্রদ খোলা হয়, মাছের সাইজ আরও বড় পাওয়া যেতো। বিএফডিসি লাভবান হতো, ব্যবসায়ীরাও লাভবান হতো। ছোট মাছ পরিবহনে নষ্ট হয়ে যায়। এতে লোকসান হবে বেশি।’

ব্যবসায়ী নেতা মো. শুক্কুর বলেন, ‘এখন চাপিলা আর কেচকি মাছটাই বেশি আসছে। আশা করি মোটামুটি ভালো হবে। যদি মাছটা ঠিক মত থাকে, বাজারটাও যদি ঠিকমতো থাকে, তাহলে ব্যবসা ভালো হবে।’

আরেক ব্যবসায়ী জাফর ইকবাল বলেন, ‘সুস্বাদু ও মিঠা পানির মাছ হওয়ায় কাপ্তাই লেকের মাছের ব্যাপক চাহিদা আছে সারা দেশেই। ফরমালিনমুক্ত, কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার হয় না। শুধু প্রাকৃতিক খাবারে বেড়ে ওঠা এসব মাছ একেবারেই অর্গানিক। এগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।’

বিএফডিসি, রাঙামাটির ব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, ‘এবার মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। তাই জেলেদের জালে ছোট মাছ-ই ধরা পড়ছে বেশি। পানি কমতে শুরু করলে অন্য বড় মাছও ধরা পড়বে।’

নতুন মৌসুমে রাজস্ব আদায় নিয়ে ব্যবস্থাপক বলেন, ‘গেলো বছর কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৮ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন মাছের শুল্কায়ন বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি। এবার এ অর্জনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছি।’

এসএইচ