পদ্মায় অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন; হুমকিতে ফসলি জমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা

পদ্মায় পাড় ভেঙে বর্তমান চিত্র
এখন জনপদে
0

পাবনা সীমান্তবর্তী নাটোরের পদ্মা নদীতে অপরিকল্পিতভাবে হচ্ছে বালু উত্তোলন। আর এতে হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজসহ গুরুপূর্ণ স্থাপনা। বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মার গর্ভে বিলীন হচ্ছে আশপাশের চরের ফসলি জমি। এতে প্রতি বছর জমির পরিমাণ কমার পাশাপাশি কমছে ফসলের উৎপাদন।

নাটোরের লালপুরের পদ্মা নদীর দিয়ার বাহাদুরপুর এলাকা। প্রতি বছর নদীর এই জায়গা থেকে বৈধ-অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয় বালু। তবে এবার বৈধভাবে ৪২টি শর্তে ১০ কোটি টাকায় সরকারিভাবে ইজারা দিয়েছে নাটোর জেলা প্রশাসন।

নদীর ঠিক মাঝে ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। ইজারা শর্তে ১২ ফুটের কথা থাকলে কোথাও ৪০ ফুট আবার কোথাও আরও গভীর থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।

পদ্মা নদীর বালু উত্তোলনের জায়গা থেকে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া এ নদীর ওপর অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর গভীর থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে পরিবর্তন হতে পারে নদীর গতিপথ। এতে হুমকির মুখে পড়বে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা।

আরও পড়ুন:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভূতত্ত্ব ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরি সারোয়ার জাহান বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ কিংবা তার পাশেই যে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প—বাংলাদেশের জন্য এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এগুলো যেহেতু নদীর ধারে অবস্থিত এবং নদীর গতিপথের সঙ্গে এদের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। অতএব, এখানে অপরিকল্পিতভাবে যেহেতু বালু উত্তোলন হয়, তাহলে এটা ওই স্থাপনার জন্য হুমকি হবে।’

এদিকে লালপুরের পদ্মায় চরগুলোতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে অনেকে। কিন্তু বালু উত্তোলনের কারণে প্রতি বছর পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। বর্ষায় এ ভাঙন আরও প্রবল হয়ে হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে গত দু’বছরে এ এলাকার অন্তত ৭০ হেক্টর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

নাটোরের লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের কৃষি জমিগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত ৫-৭ বছরের পরিসংখ্যানে আমরা দেখতে পাই, প্রায় ৭০ হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।’

পদ্মা নদীর ঠিক এই জায়গাতে ২৫ থেকে ৪০ ফিটের মধ্যে বালু উত্তোলণ করা হচ্ছে। কিন্তু এটি একটি বৈধ মহাল হলেও দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাকশি হাডিঞ্জ ব্রীজ ও রুপপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প। 

বিশেজ্ঞরা বলছেন, এত গভীরে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে। এতে করে এসব উন্নয়ন প্রকল্পে এক সময় আঘাত হানতে পারে। তাই এখনই এসব প্রকল্প রক্ষার জন্য পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেজ্ঞরা।

এসএইচ