৮০ বছর পর বেহাতের পথে ময়মনসিংহের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি

ময়মনসিংহ
শাখারি পট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
এখন জনপদে
0

ময়মনসিংহ নগরীতে বেহাতের পথে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি। আদালতের রায়ে শাখারি পট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জমির মালিকানা দাবি করে দখল বুঝিয়ে দিতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন বিপুল সিংহ রায় নামের এক ব্যক্তি। জেলা প্রশাসক জানান, একটি চক্র নানা জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সরকারি সম্পত্তি নিজেদের কব্জায় নেয়ার চেষ্টা করছে।

স্কুল ভবনের নিচ তলায় সাজানো গোছানো প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষ। আপন মনে খেলাধুলায় মগ্ন থাকেন শিশুরা। আনন্দপাঠে ফুলপাখিদের কলরব। দেয়াল যেন নান্দনিকতার ক্যানভাস।

ময়মনসিংহ নগরীর প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাখারি পট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৪৫ সালে সাত শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি জাতীয়করণ করা হয় ১৯৭৩ সালে। স্কুলের পুরাতন ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় সেটি ভেঙে নতুন তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হয় ২০২৪ সালে। তবে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান থাকলেও হঠাৎ নেমে এসেছে অস্বস্তি।

ময়মনসিংহ নগরীর কালিবাড়ী বাইলেনের বাসিন্দা বিপুল কুমার সিংহ রায় নামের এক ব্যক্তি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্কুলের জমির দখল বুঝিয়ে দিতে গত ২৯ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। এরপরই আলোচনায় আসে বিষয়টি।

স্কুলের জমি বেহাত হতে যাওয়ার খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্কুলের শিক্ষকরা। প্রায় ১২ বছর ধরে মামলা চললেও স্কুল বা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ এ বিষয়ে কোনো নোটিশ বা সমন পাননি । আর অভিভাবকরা বলছেন, ৮০ বছর পর কীভাবে স্কুলের জমির নতুন মালিকানা তৈরি হলো বিষয়টি তদন্ত করা উচিৎ।

অভিভাবকরা জানান, ৮০ বছর পর জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। অবৈধভাবে দখল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

আরও পড়ুন:

ময়মনসিংহ শাখারি পট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক লিপি মনিকর বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানতে পারি নাই। আমরা কোনো নোটিশও পাইনি এ বিষয়ে।’

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন বলেন, ‘মামলা করা হয়েছে তবে আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। মামলার তারিখগুলোও আমাদের জানানো হয়নি।’

জেলা প্রশাসককে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের হেড অফিস থেকে আমাদের চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসককে মামলা করার জন্য।’

এদিকে বিপুল কুমার সিংহ রায় জানান, অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি মামলা ও আপিলে ডিক্রি পেয়ে খারিজের জন্য আবেদন করেছেন। তবে এ বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মেনে নেবেন তিনি।

স্কুলের জমির মালিকানা দাবীদার বিপুল কুমার সিংহ রায় বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল আপিলে সেখানে আমরা জিতেছি। পরে আমরা ডিসির কাছে খারিজ চাই। আদালত আমাকে মালিকানার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এখন ওনারা আমার নামে স্বীকারোক্তি দিয়ে আমার নামে জায়গাটি খারিজ করুক।’

জেলা প্রশাসক জানান, মামলার আর্জিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্কুলের জমি পরিত্যক্ত দেখিয়ে একতরফা দু’টি রায় নিজেদের পক্ষে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলটি বাংলাদেশ সরকারের রেকর্ডে আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত আছে। অর্পিত সম্পত্তির যে ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সে ট্রাইব্যুনাল আপিল দায় হওয়ার পরে উচ্চ আদালতে যাওয়ার আর সুযোগ নেই।’

এসময় রিট দায়ের করতে গত ২৮ আগস্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অর্পিত সম্পত্তি শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।

চিঠিতে বলা হয়, যেহেতু নালিশী সম্পত্তিতে শাঁখারী পট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেহেতু নালিশী সম্পত্তিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত রয়েছে।

এমতাবস্থায়, বিজ্ঞ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালের মোকদ্দমা নম্বর: ৬০৩/২০১৩ (অর্পিত) ও আপিল ট্রাইব্যুনালের মোকদ্দমা নম্বর: ২৮/২০২২ নং (অর্পিত আপিল) এর রায় ও ডিক্রীর বিরুদ্ধে জরুরীভিত্তিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করে অত্র কার্যালয়কে অবহিতকরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এফএস