রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নওগাঁ ব্যতীত আমের বাগানের এমন বিস্তার দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে নেই। আড়াইশ’র বেশি জাতের সুমিষ্ট আমের ৯৫ ভাগই এ অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। মৌসুমে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আমের বেচাকেনা হয় এ অঞ্চলে।
ক্রেতাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে নিতে এসেছি। এখান থেকে আম নিয়ে আবার গাড়িতে করে চলে যাবো। এখানে সব জেলার মানুষই আসে। কেউ অনেক নেয় আবার কেউ অল্প নেয়।’
বিগত বছরগুলোয় আমের ক্রেতা তালিকায় নতুন নাম হয়ে উঠেছেন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। তারা বাগান বা হাট থেকে উন্নত আম খুঁজে ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। চাহিদা বাড়ায় বাড়ছে উদ্যোক্তার সংখ্যা। আম পরিবহনে এই উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় কুরিয়ার সার্ভিসের। তবে, এই নির্ভরশীলতায় দিন দিন বাড়ছে কুরিয়ারগুলোর একচেটিয়া মনোভাব।
বিক্রেতাদের মধ্যে একজন বলেন, বানেশ্বরে যেসব কুরিয়ার আছে তারা প্রতিনিয়ত আমাদের মতো অনলাইন প্লাটফর্মের লোকগুলোকে হ্যারাজমেন্ট করছে। তারা দেখা যায় যে কমিটমেন্ট তো নষ্ট করেই, তারপরও আমরা যে টাকার বিনিময়ে পণ্য পাঠাই তারপর কোকো কারণে যদি তারা ক্ষতিপূরণ দেয় তাহলে তার ৫০ শতাংশও দিতে চায় না।’
অন্য একজন বলেন, ‘ক্রেতার কাছে যেতে ঢাকার মধ্যে ২৪ ঘণ্টা, ঢাকার বাইরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এনাফ। তারা তিনদিন, চারদিন, পাঁচদিন লাগাচ্ছে।’
সেবাদানে কুরিয়ার সার্ভিসের এমন স্বেচ্ছাচারী ও উদাসী আচরণে, আম পচে যাওয়া, ছেড়াফাঁটা মোড়ক, আম চুরি হওয়া বা কখনো পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়াসহ ভোক্তার থেকে আসে নানা অভিযোগ।
ফলস্বরূপ, চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের ৭৩টি বড় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৩২ লাখ টাকা। এছাড়াও আম পাঠিয়ে ক্ষতির শিকার এমন ছোট উদ্যোক্তার সংখ্যা অর্ধশতর বেশি।
উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট দিয়েছিল যে তিনদিনের মধ্যে তারা ডেলিভারি করবে। সেটা তারা তিনদিনে না করে আট থেকে ১২ দিনের মধ্যে করেছে। আমার নিজে সেখানে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি।’
তবে এ নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, মার্চেন্টদের ক্ষতির পরিমাণ সামান্যই। সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তারা।
স্টিডফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিসের বানেশ্বর শাখার ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘আমি আমার এই শাখা থেকে চার হাজার ক্যারেট পণ্য পাঠিয়েছি। আমার পুরো রাজশাহী চাঁপাই মিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার ক্যারেট আম পাঠিয়েছি। এক গাড়ি আগে গেছে, ক গাড়ি পরে গেছে। এখন বিষয় হচ্ছে সব আম যে নষ্ট হয়েছে তা কিন্তু না। যদি কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় বা কোনো পার্সেলে ক্ষতি হয় তাহলে সেটা আমাদের দিলে আমরা আগে সেটা ভেরিফাই করছি।’
এ অবস্থায় এ অঞ্চলের জি-আই পণ্য আমের সুনাম ও বাজার টিকিয়ে রাখতে আম পরিবহনে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি বাগানিদের। এদিকে ভোক্তা অধিকার বলছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন তারা।
রাজশাহী বিভাগের জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘যদি কোনো ভোক্তা বা ক্রেতা তার অর্ডার করা পণ্য যথাযথভাবে না পান তাহলে এটা আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। এটা একদম সহজ, সরাসরি অভিযোগ করতে পারবেন অনলাইনে।’
দ্রুত সময়ে ও সহজে আম পরিবহনে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি এ অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের।