দাম ভালো পাওয়ায় তামাক চাষিরাও ঝুঁকছেন তুলা চাষে

তুলা খেত ও প্রসেসিংয়ের কারখানায় কর্মরত শ্রমিক
কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
এখন জনপদে
0

দেশে গেল মৌসুমে ২ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছে। তুলা থেকে তৈরি সুতা ছাড়াও উপজাত পণ্য ভোজ্য তেল, মাছ ও গবাদিপশুর খাবার খৈল হিসেবে ১২ কোটি ডলার আমদানি মূল্য সাশ্রয় হয়েছে। এদিকে দাম ভালো পাওয়ায় অনেক তামাক চাষিরাও ঝুঁকছেন তুলা চাষে। যদিও তুলার ফলন পেতে সময় লাগছে ৭ মাসের বেশি। তাই উন্নত জাত উদ্ভাবনের দাবি কৃষকদের।

গেল বছর শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বোনা তুলা গাছে ফলন আসে সাত মাসে, এরপর কয়েক দফা তুলা সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন কৃষকরা, বর্তমানে শেষ পর্যায়ে তুলা গাছের জীবনকাল। তাইতো চুয়াডাঙ্গা জেলার দোলদিয়াড় গ্রামের কৃষকদের এমন ব্যস্ততা সাদা সোনা খ্যাতি পাওয়া তুলাকে ঘিরে।

গেল মৌসুমের শুরুতে টানা বর্ষণে তুলার বীজতলা নষ্ট হয়েছে। যে কারণে উচ্চ মূল্যের হাইব্রিড বীজ কিনতে টান পড়ে কৃষকের পকেটে। আমদানি করা এসব বীজের কেজি প্রায় ৩ হাজার টাকা। এক কৃষক জানান, যখন তুলা চাষ করা হয় তখন লোন চাইলে ব্যাংককে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ দিতে হয়।

তুলা চাষ হয় এমন দেশগুলোতে কৃষকের তুলার বীজ বপন থেকে শুরু করে ফলন তুলতে সময় লাগে ৫ মাস। অন্যদিকে বাংলাদেশের কৃষকদের সময় লাগছে ৭ মাসের বেশি। এক্ষেত্রে তুলার উন্নত জাত উদ্ভাবনে গবেষণার কথা বলছেন তারা।

চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় ২ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের তুলার চাষ হয়েছে। যার সিংহভাগই দৌলতপুর উপজেলায়।

কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ আল মামুন বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের তুলা নেয়ার সরকারি কোনো নির্দেশনা থাকলে বিক্রির মাধ্যমে চাষিদের বকেয়া বা পেমেন্ট দেয়ার সুবিধা হতো।’

তুলা উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে তামাক কৃষিপণ্য হলেও তুলাকে এখনও কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। যে কারণে ঋণও পান না চাষি ও জিনার্সরা।

চুয়াডাঙ্গা জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা সেন দেবাশীষ বলেন, ‘পেঁয়াজ, আদা, রসুনের ক্ষেত্রে কৃষকরা ৪ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ পায়। কিন্তু তুলার ক্ষেত্রে যেহেতু কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয় নি সেজন্য কৃষকদের ১০-১২ শতাংশ সুদ দিতে হয়।’

মেহেরপুর জেলার কৃষকরাও ঝুঁকছেন তুলা চাষে। ফলন ভালো হলেও শ্রমিক সঙ্কটে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। বর্তমানে কৃষকদের উৎপাদিত তুলা ১০০ টাকা কেজিতে কিনে নেন জিনাররা। তারা বলছেন, চাহিদার বিপরীতে মৌসুমে তুলা আসে এক চতুর্থাংশেরও কম।

সরকারের নীতি সহায়তা পেলে দুই লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করা সম্ভব। এতে দেশে যে পরিমাণ তুলা আমদানি হয়, তার চার ভাগের এক ভাগ দেশে উৎপাদন সম্ভব। এক্ষেত্রে তুলা গাছের জীবনকাল কমিয়ে আনতে গবেষণা প্রয়োজন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফখর আলম ইবনে তাবিব বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদি জাত উৎপাদন আমাদের একটা টার্গেটে আছে। যার জন্য আমরা মনে করি এখানে বায়োটেকনোলজিক্যাল কিছু ইন্টারভেনশন দরকার।’

হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করা এ জমিটিতে কিছুদিন আগেও এভাবেই তামাক চাষ হতো। আমদানি বিকল্প কৃষি পণ্য হিসেবে তুলা স্বীকৃতি পেলে বাড়বে তুলা চাষির সংখ্যা।

এএইচ