নানা সংকটে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নওগাঁর কৃষকরা

নওগাঁয় পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পাটের ক্ষেত
কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
এখন জনপদে
0

আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা, শ্রমিক সংকট ও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় নওগাঁয় পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা। এতে পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কমেছে। তবে, পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস পাট অধিদপ্তরের।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক সালেক। গত বছর দুই বিঘা জমিতে দেশি জাতের পাটের আবাদ করে লাভ করেছিলেন অন্তত ৩০ হাজার টাকা। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ১৮ কাঠা জমিতে পাট রোপণ করলেও বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায় প্রায় অর্ধেক। খরচের টাকা উঠবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

সালেক জানান, মৌসুমের পাট বোনার সময় বৃষ্টিতে পাট বুনতে সমস্যা হয়। তবুও তিনি প্রায় ১৮ কাঠা জায়গায় পাট বুনেছেন। কিন্তু বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায় পাট।

একই অবস্থা সদর, মান্দা, বদলগাছী ও ধামইরহাট উপজেলার পাট চাষিদের। বেশিরভাগ পাটের চারা গজানোর পর বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। আবার যেসব জমিতে চারা গজিয়েছে সেগুলোও মরে ফাঁকা হয়ে আছে। পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়া, আঁশ ছাড়ানোর বিড়ম্বনায় অন্য চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে হারাতে বসেছে পাটের সোনালি ঐতিহ্য। পাঁচ বছরের ব্যবধানে জেলায় পাটের আবাদ কমেছে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি। আর চলতি বছর ১৫০ হেক্টর কমে পাটের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে।

কৃষকরা জানান, এবার আবহাওয়া ভালো না। তাই ফলন ভালো হচ্ছে না। অর্ধেক জমিই পানির কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাট চাষে পরিশ্রম বেশি, তবে সে তুলনায় ভুট্টা চাষে পরিশ্রম কম বলেও জানান তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় এ বছর ১০ হাজার ৫০০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে উন্নত জাতের পাট বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদান করা হয়েছে। পাটের ন্যায্য দাম ও আঁশ ছাড়ানো সুবিধা বাড়ানো গেলে আগামীতে চাষাবাদ বাড়বে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা মাঠে পরিদর্শন করছি। এবং তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনে সে অনুযায়ী আমরা পাট চাষ বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

নওগাঁ পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘পাটের বাজারমূল্য এবং আঁশ ছাড়ানোর আধুনিক কৌশল সুবিধা যদি বাড়ানো যায় তাহলে পাটের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়া সম্ভব।’

জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর তিন হাজার ৪১০ হেক্টর জমি থেকে ৯ হাজার ৬৮৫ টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার বাজারমূল্য অন্তত ৭২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার বেশি।

ইএ