চীনা নাগরিক দুইজন হলেন হু জুনজুন (৩০) ও জ্যাং লিজি (৫৪) এবং অপরজন বাংলাদেশি নাগরিক মো. নয়ন আলি (৩০)। গাইবান্ধা জেলার শ্রাবন্তি আক্তার (১৯) নামের এক ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি প্রথমে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নজরে আসে।
ভুক্তভোগীকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পাচারকালে তিনি বিমানবন্দরের মূল প্রবেশ পথ গোলচত্বর এলাকায় এয়ারপোর্ট এপিবিএন পুলিশের নিকট অভিযোগ করেন যে, হু জুনজুন ও জ্যাং লিজি নামে দু’জন চীনা নাগরিক তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছেন।
অভিযোগকারীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সহকারী পুলিশ সুপার জনাব ফাউজুল কবীর মঈন তার ফোর্সের সহযোগিতায় উক্ত চীনা নাগরিকদেরকে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসেন। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ভুক্তভোগীর দেয়া তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাড়িতে আরো দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগীরা অবস্থান করছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এয়ারপোর্ট এপিবিএনের একটি চৌকস দল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সেই বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে তারা মো. নয়ন আলি নামের আরেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের সাথে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এক সূত্রে জানা যায়, মানব পাচারকারী চীনা নাগরিকরা আনুমানিক একবছর পূর্বে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে তারা উভয়ই বসুন্ধরা এলাকায় বসবাস করতে থাকেন এবং দেশিয় বিভিন্ন দালালদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশি নাগরিক মো. নয়ন আলির সহযোগিতায় ভুক্তভোগীকে বিবাহ করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাতে থাকেন। তাদের পরস্পর যোগসাজশে ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ের জন্য রাজি করানো হয়।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর নামে ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করেন তারা। অতঃপর গত মার্চ মাসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে হু জুনজুনের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের সামগ্রিক কাজে জ্যাং লিজি ও মো. নয়ন আলি সহযোগিতা করেন।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীকে না জানিয়ে চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য জ্যাং লিজি ও ভুক্তভোগীর নামে বিমান টিকিট বুক করেন। বিএস৩২৫ ফ্লাইটে ভুক্তভোগীকে চীনে পাচার করার জন্য জোর পূর্বক বাসা থেকে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়।
আজ ভুক্তভোগীর মা রাশিদা (৪৩) নিজে বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মানব-পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৬(১)/৬(২)/৭/৮/১০ ধারায় মামলা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এপিবিএন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানব-পাচারের অপরাধে চীনা নাগরিক আটকের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। আমরা লক্ষ্য করছি, বেশ কিছু মানব-পাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করার চেষ্টা করে। গোপন তথ্য বা অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি।’
মানব পাচার প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নিরলসভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।—প্রেস বিজ্ঞপ্তি