জানা যায়, নগরীর ব্রহ্মপল্লী এলাকার হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে গত ৪ আগস্ট স্ত্রীকে নিয়ে যান ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে কর্মরত উপ পরিদর্শক লুৎফুর রহমান। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করতে বলায় রোগীকে নিয়ে তিনি বাইরে যেতে চান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিফট বন্ধ করে দেয়। বারবার অনুরোধ করলেও লিফট চালু করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পরে বাধ্য হয়ে প্রসূতি স্ত্রীকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যান। একপর্যায়ে সিড়িতে পড়ে যান ওই নারী। এতে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করেন। পরিবারটির দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ওই নারী অন্য একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
হাসপাতালটির এক আয়া জানান, জামালপুর হাসপাতাল থেকে রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রের্ফাড করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। কিন্তু হেলথ কেয়ার হাসপাতালের সাবেক ম্যানেজার মো. হান্নান ফুসলিয়ে রোগীকে এখানে নিয়ে আসেন। তখন কোনো ডাক্তার ছিল না। এসময় রোগীর মারাত্মক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে রোগীর স্বজনরা লিফট বন্ধ থাকার কারণে দোতলা থেকে রোগীকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামায়।
আজ (বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট) দুপুরে জেলার সিভিল সার্জন ছাইফুল ইসলাম খানের সই করা নোটিশে জানানো হয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। শিশু মৃত্যুর ঘটনা ও অনিয়ম নিয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালটি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
এ ঘটনায় থানায় ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা দায়ের করলে হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রঞ্জন নন্দী, হাসপাতালটির কর্মী পাপ্পু ও মজিবুর রহমান নামের তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালটিতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ। এ কারণে ঘটনাটি জানার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এটি বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হাসপাতালের মালিক-ম্যানেজারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’
ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ছাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘হাসপাতালটির লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনা দেখে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’