ইলিশ সংকটে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছ ঘাট, অস্তিত্বের হুমকিতে বাজার

চাঁদপুরের ইলিশের বাজার
এখন জনপদে
অর্থনীতি
0

চাঁদপুরের বড় স্টেশন মাছ ঘাটে দেখা দিয়েছে ইলিশ সংকট। মৌসুমে এক সময় প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মাছ বিক্রি হলেও সাম্প্রতিক বছরে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে ইলিশের সরবরাহ। ক্রমাগত লোকসানে আড়তদারসহ বাজার ঘিরে গড়ে ওঠা অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে ঐতিহ্যবাহী বাজারটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। প্রশাসন বলছে, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বৃদ্ধি করা হচ্ছে চাষের মাছের উৎপাদন।

চাঁদপুরের ইলিশের খ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও। ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ আর উন্নত যোগাযোগের কারণে ব্রিটিশ আমলেই ডাকাতিয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠে বড় স্টেশন মাছ ঘাট। যেখান থেকে সারাদেশে পৌঁছে যায় রূপালী ইলিশ। যাতে সমৃদ্ধ হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। 

কিন্তু বড় স্টেশন মাছ ঘাটের সেই বনেদি অবস্থা এখন আর নেই। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ মাছ বিক্রি হত। সেখানে এখন মাছের তীব্র সংকট। ক্রমাগত লোকসানে বেশিরভাগ আড়ৎদার প্রায় সর্বস্বান্ত। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকা শত শত শ্রমিক হারিয়েছেন কর্মসংস্থান। 

ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ঘাটে মাছ আসলে আমরা কিছু টাকা রোজগার করতে পারবো, না আসলে তো পারবো না, আর এতে সংসারও চালাতে পারবো না।’

আড়ৎদারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা যারা আড়ৎদার আছি, তাদের প্রত্যেক বছরই জেলেদের দাদন দিতে হয়। এ কারণে আমরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছি।’

এদিকে মাছ ঘাটকে ঘিরে গড়ে ওঠা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান, প্যাকেজিং, বরফকলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাতেও ভাটা পড়েছে। চলতি মৌসুমেও ইলিশের তেমন দেখা না পাওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ব্যবসা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। মাছের বাজার এখন আগের চেয়ে খারাপ।’

মূলত ২০২২ সাল থেকে ক্রমাগত কমেছে ইলিশের সরবরাহ। এক দিকে স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় চলছে মাছের আকাল। অন্যদিকে, উপকূলীয় এলাকায় নতুন নতুন আড়ৎ তৈরি হওয়ায় কমছে সামুদ্রিক ও দক্ষিণাঞ্চলের মাছের সরবরাহ। 

মাছ সংকটে কয়েক বছরের ব্যবধানে ইলিশের দাম বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। আগে এক কেজি ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় পাওয়া গেলেও এখন তা ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। নদীতে মাছ আহরণ বাড়াতে সরকারকে  ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান মৎস্যজীবীদের। 

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার বলেন, ‘এই ল্যান্ডিং স্টেশন কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান। এভাবে চলতে থাকলে এই লোকগুলো বেকার হয়ে যাবে।’

তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, ইলিশের সরবরাহ কমলেও চাষের মাছের উৎপাদন বেড়েছে। এ ছাড়া ইলিশের আহরণ বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার।  

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় ইলিশের উৎপাদন হয়ত সাম্প্রতিক সময়ে একটু কমেছে, কিন্তু অন্যান্য মাছের উৎপাদন বেড়েছে। এরা বেকার হবে না। তবে আমরা সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছি যে, ইলিশের উৎপাদন কমে গেছে।’ 

ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুরে স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি বড় স্টেশন মাছঘাট। আবারো ইলিশে পরিপূর্ণ হয়ে ঐতিহ্যবাহী এই মাছঘাটে কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয় মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষের।

এসএইচ