সেপ্টেম্বর থেকে ডিপোগুলো কনটেইনার চার্জ ২০-৫০% বাড়াচ্ছে, রপ্তানিকারকদের আপত্তি

চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বন্দর
অর্থনীতি
1

খালি ও রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন ও হ্যান্ডলিং চার্জ ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াচ্ছে কনটেইনার ডিপোগুলো। ডিপো মালিকদের সংগঠন বলছে, যন্ত্রপাতি আমদানি খরচ ,শ্রমিকদের মজুরি ও বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় চার্জ বাড়ানো হচ্ছে। যা কার্যকর হবে সেপ্টেম্বর মাস থেকে। তবে রপ্তানিকারকরা বলছেন, সেবা গ্রহীতাদের সাথে কথা না বলেই নিজেদের ইচ্ছা মত চার্জ বাড়ানো হচ্ছে যা অগ্রহণযোগ্য।

৯৩ শতাংশ রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানোর আগে কনটেইনারে উঠানো-নামানো ডকুমেন্ট প্রসেসসহ আনুষঙ্গিক সব কার্যক্রম চলে চট্টগ্রামের ১৯টি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে। এর বাইরে বর্তমানে ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসের পর ডেলিভারি দেয়া হয় এসব ডিপো থেকে। এজন্য পণ্য ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান থেকে উঠা-নামা, পরিবহন, ডেলিভারি, যন্ত্রপাতি ব্যবহারসহ ১৬ থেকে ১৭ ধরনের সেবার বিপরীতে মাশুল নেয় ডিপোগুলো।

আইসিডি পরিচালনাকারীদের দাবি, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার সাথে যন্ত্রপাতি আমদানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ সার্বিক পরিচালন ব্যয় ও বিনিয়োগ বেড়েছে বহু গুণ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে রপ্তানির কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ও ২০২২ সালে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়লে বেশ কিছু সেবার মাশুল বাড়ানো হয়। এরপর গত তিন বছরে কোন মাশুল না বাড়ানোয় তৈরি হয়েছে মূলধন সংকট। এতে আইসিডিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় টিকে থাকতে খালি ও রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও পরিবহন চার্জ বাড়ানো হচ্ছে। যা কার্যকর হবে সেপ্টেম্বর থেকে।

বিকডা মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘২০১৬ সালের পর থেকে এ সেবাগুলোর রিভাইস করা হয়নি এবং গত নয় বছরে বেসরকারি ওয়াপদাগুলোর লেবার খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার ডিভ্যালুয়েশন হয়েছে, এ কারণে ওয়াপদাগুলো সেবা মাশুল বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওয়াপদাগুলো তাদের নিজস্ব ক্লায়েন্টের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সেবা মাশুল নির্ধারণ করবেন এবং সে অনুযায়ী তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।’

রপ্তানিকারক ও সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, আইসিডিগুলোর বর্তমান সেবার চার্জ বন্দর থেকেও দ্বিগুণ। অথচ ব্যবহারকারীদের সাথে আলোচনা ছাড়াই অবারো অস্বাভাবিকভাবে মাশুল বাড়িয়েছে তারা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন ও কাঁচামালের ব্যয় বৃদ্ধির সাথে মার্কিন শুল্ক চাপে কঠিন সময় পার করছে দেশের রপ্তানি খাত। এই অবস্থায় আইসিডিগুলোর চার্জ বাড়ানোয় রপ্তানি খাতে আরও সংকট তৈরি হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ সভাপতি এ এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা না করে মনগড়া কোন প্রাইস যদি বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে এটা কোনভাবেই একসেপ্ট করা যাবেনা। এমনিই আমাদের এক্সপোর্টের ব্যবসার জন্য যে টারমারেন্স আসে তাতে আমাদের এখন হচ্ছে না, এর মাঝে যদি আমাদের আবার এক্সপোর্টের ব্যয় বেড়ে যায় তাহলে ব্যবসা পরিচালনা কষ্টকর হয়ে যাবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী বলেন, ‘আমেরিকার শুল্ক আরোপের পরে রপ্তানিকারকরা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। তাদের অনেক রপ্তানি এখন ডিটেইন করে দিয়েছে শুল্কের জন্য। এ চার্জগুলো প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতিটা আইটেমের জন্য। এটা আমাদের দেশে প্রভাব ফেলবে আগামী দিনের জন্য, এবং আমদানি রপ্তানি কমে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।’

ডিপো আমদানি রপ্তানি ও খালি মিলিয়ে বছরে মোট ২২ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে বেসরকারি ১৯টি কনটেইনার ডিপো।

ইএ