জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রেকর্ড ৬৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা ব্যাংকিং খাতে এখন সবচে বেশি। যে ব্যাংকটি একসময় দেশের অন্যতম ভালো ব্যাংক ছিল, সেটি একাধিক ঋণ কেলেঙ্কারির পর আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
৫ আগস্ট পরবর্তী জনতা ব্যাংক কেন্দ্রিক দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হবার পাশাপাশি পদোন্নতি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু অনুমোদনের আগেই এই নীতিমালা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, মেধার দিক বিবেচনায় না রেখে চাকরিতে যোগদানের সময়কালকে গুরুত্ব দিয়ে পদোন্নতি নীতিমালা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। যেখানে সিনিয়র অফিসারদের মেধাভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবমূল্যায়নের সুযোগ আছে বলেও অভিযোগ। । যেখানে অনৈতিক সুযোগ পাবে দশম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়া একটি বিশেষ গোষ্ঠী।
বর্তমানে নবম ও দশম গ্রেডের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন থাকা সত্ত্বেও প্রস্তাবিত নীতিমালায় এমনভাবে নম্বর বরাদ্দ করা হচ্ছে যা সিনিয়র অফিসার হওয়ার পরও কেউ কেউ কেউ পদোন্নতির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন। যদিও বিতর্কিত নতুন এ নীতিমালা নিয়ে উৎসুকদের রয়েছে নানা যুক্তি।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে জনতা ব্যাংকের কোনো জ্যেষ্ঠতা নেই।’
অন্য একজন বলেন, ‘২০১১ থেকে ২০২৫ সাল, এই ১৪ বছরে আমরা মাত্র একটা পদোন্নতি পেয়েছি।’
অন্য একজন বলেন, ‘বিআরসি তুলে দেয়া হলো, মানে ব্যাংকগুলোতে ইচ্ছামতো নিয়োগ করা হলো এবং সেই নিয়োগে যারা যোগ দিয়েছে তাদের প্রমোশন দেয়া হলো।’
কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে উনারা একটা জায়গায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, লেন্থ অব সার্ভিসের জায়গায় নম্বর দিয়েছে সাত।’
২০১৯ সাল ও পরবর্তী সময়ে সরাসরি জ্যেষ্ঠ অফিসার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ নীতিমালায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ব্যাংটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠিও দিয়েছেন তারা।
অভিযোগ আছে- প্রস্তাবিত নীতিমালাটি আবুল বারকাতের চেয়ারম্যান থাকাকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সুবিধা দিতেই তৈরি। তার সময়ে জনতা ব্যাংকে নানা অনিয়ম ও দলীয়করণ করা হয়। পূর্বের গঠিত ব্যাংটির পরিচালনা পর্ষদেও খুব একটা পরিবর্তন আসেনি এখনও।
বিশেষজ্ঞদের মত, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে জনতা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাধাগ্রস্ত হবে স্বাভাবিক অগ্রগতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘কোনো একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাংকের বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন করার এখতিয়ার আসলে আছে কি না এটা একটা বড় প্রশ্ন। ব্যাংকগুলোর সার্বিক নীতিমালার ক্ষেত্রে, তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে, নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্বিক একটা নীতিমালার ক্ষেত্রে একটা সমন্বয় থাকা দরকার সবগুলো ব্যাংকেরই।’
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সমন্বিত পদোন্নতি নীতিমালা করছে সরকার। এর বাহিরে যেয়ে নতুন নীতিমালার কি প্রয়াজন ছিলো- জানতে চেয়েছিলাম ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমানের কাছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন করে কোনো নীতিমালা করছি না। যেকোনো নীতিমালা থাকলে তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপডেট করা হয়। এটা শুধু আপডেটের একটা অংশ। নয় সদস্য বিশিষ্ট একটা কমিটি করে দিয়েছি। তারা কাজ করছে।’
দুর্নীতি, প্রভাব বিস্তার আর কর্মকর্তাদের অনিয়মের খেলাপিতে জর্জরিত জনতা ব্যাংক ডুবতে বসেছে।