ব্যালেন্স শিট থেকে একটি নির্ধারিত সময়ের পর আদায়যোগ্যতা হারিয়েছে এমন মন্দ ঋণ হিসাবের সুবিধার্থে সরিয়ে ফেলে ব্যাংকগুলো। দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এভাবে ঋণ অবলোপনের পরিমাণও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতে মোট অবলোপন করা ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। আর এই খাতের ঋণের ৬৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
২০০৩ সাল থেকে ঋণ অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ চালু হয়। তবে ঋণ অবলোপনের আগে অর্থঋণ আদালতে মামলার বিধান রয়েছে। যেখানে দেখা হয়- ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতির দিকটিও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে- দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৪টিই গেল ২১ বছরে খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। ঋণ অবলোপনের এই প্রবণতায় ব্যাংক খাতে প্রকৃত খেলাপির চিত্র আড়াল হচ্ছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের।
অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ‘টানা তিন বছর যদি খেলাপি ঋণ চলমান থাকে সেটাকে কমিয়ে নিয়ে এসে দুই বছর করে, দুই বছর পর সেটাকে অবলোপন করতে পারবেন। অবলোপন করলে তো ঋণটা আদায় হলো না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলতার কারণে ঋণ অবলোপন বেড়েছে। একসময় ঋণ অবলোপনে কমপক্ষে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হতো। ২০১৯ সালে এই সময়সীমা কমিয়ে তিন বছর করা হয়। বর্তমানে দুই বছর ধরে খেলাপি ও লোকসানে থাকা ঋণই অবলোপন হিসেবে দেখানো হয়। এমন অবস্থায় কঠোর অবস্থার কথা জানালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘কোনো ব্যাংক যদি প্রবিশন শতভাগ রেখে তার বুকটাকে ক্লিন করার জন্য রাইট অফ করে, সেক্ষেত্রে এটাকে নেগেটিভলি দেখার সুযোগ কম। আর এ থেকে গ্রাহকও মুক্তি পাচ্ছে না। কারণ তার বিরুদ্ধে অলরেডি মামলা দায়ের করা আছে।’
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের শীর্ষ ১০টি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ অবলোপন করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক একাই অবলোপন করেছে আট হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের মতে, ঋণ অবলোপনের অপব্যবহার বন্ধ করে প্রকৃত খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ প্রয়োজন।