খেলাপি ঋণে জর্জরিত শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে এসব ব্যংকের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ গুরুত্ব পাবে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এ সিদ্ধান্তে আপত্তি রয়েছে কোনো কোনো ব্যাংকের।
বিগত সরকারের সহযোগিতায় কিছু শিল্পগোষ্ঠীর অযাচিত হস্তক্ষেপ, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেশের পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ব্যাংকগুলোর ঋণের বড় অংশই চলে যায় খেলাপিদের হাতে। লোকসানে পড়ে গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছিল না ব্যাংকগুলো।
একীভূতকরণের প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে এক্সিম ব্যাংকের। ব্যাংকটি বলছে, দুর্বলের সঙ্গে একীভূত হলে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন। শেখ হাসিনার অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কারাগারে থাকা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারারের নিকট-আত্মীয় তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে এ পাঁচ ব্যাংকে মূলধনের ঘাটতি পাহাড় সমান। দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা এসব দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতেই একীভূত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘মার্জার প্রোসেসটা জোরেশোরে চলছে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর তারা ঘুরে দাঁড়াবে এবং একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সক্ষম হবে। তাদের আওতার বাইরে রাখা হবে।’
একীভূত করার সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলোর ৯২ লাখ গ্রাহক এবং ১৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও কর্মীদের চাকরি হারানোর শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাংক একীভূত করার নজির রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হলেও বিভিন্ন নিয়ম এবং সুশাসনের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয়ের বিষয়টা হয়েছে।’
অর্থনীতিবিদ হেলাল আহম্মেদ খান বলেন, ‘এক্সিম ব্যাংক বরাবরই বলতেছে যে আমরা আসলে এ মার্জের সঙ্গে যেতে চাই না। অথচ আপনি খেয়াল করলে দেখবেন যে এই এক্সিম ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা দিয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে, এখনও দিয়ে যাচ্ছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এতো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। অডিট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু ব্যাংক একীভূত করার প্রয়োজন ছিল আগেই।
সিএসপিএসের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা মার্জ করে কোনো ব্যক্তিকে দেয়অ হচ্ছে না, সরকারের হেফাজতে রাখা হচ্ছে। একটা সময় ব্যাংকগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় এনে তারপরে কোনো বিদেশি-বেসরকারি মালিক, বেসরকারি ডিরেক্টর— এদের হাতে তুলে দেয়া হবে। আমি মনে করি, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত।’
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘ইসলামি ধারার বাইরে আরও অনেক ব্যাংক আছে, যারা এ মুহূর্তে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। তাদের জন্য এটা একটা শিক্ষা। আমাদের দেশে এত ব্যাংক থাকবে কি না, সেটা একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘বেশিরভাগ উত্তর যা তারা দেবে, সেগুলো যদি অনেকটা বাস্তবের ওপর ভিত্তি না থাকে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত তাদের মেনে নিতে হবে।’
ইসলামি শরিয়াভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন জরুরি বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।