যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ ভারতের জন্য ধাক্কা; বাংলাদেশের বড় সুযোগ

বাংলাদেশের গার্মেন্টসে কাজ করা কিছু নারী
আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নতুন ২০ শতাংশ ট্যারিফ কার্যকর হয়েছে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ হওয়ার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ সুযোগ কাজে লাগানোর তাগিদ তাদের।

গত এপ্রিলে বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেসময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর প্রথমে ৩৭ শতাংশ ও পরে তা কিছুটা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় মার্কিন প্রশাসন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করে তা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন পাল্টা শুল্ক। ২০ শতাংশ ট্যারিফ কেমন হলো বাংলাদেশের জন্য? কী বলছেন ব্যবসায়ীরা?

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘যাদের সঙ্গে আমরা মূলত প্রতিযোগিতা করি, তাদের চেয়ে আমাদেরটা বেশি নয়। পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো প্রায় সবগুলোই সমান, চীন এবং ভারত ছাড়া। ফলে আমরা অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছি।’

বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, ‘২০ শতাংশ ভালো ব্যাপার। ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়া, জর্ডান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া এরা হলো আমাদের প্রতিযোগী।’

আরও পড়ুন:

এদিকে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির ‘শাস্তি’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে দেশটিতে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন বাজারে ভারতের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম শুল্ক সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক, চামড়া ও জুতা শিল্পের মতো প্রধান রপ্তানি খাতে এই শুল্ক ব্যবধানের কারণে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা কমতে পারে, যার সরাসরি সুফল পেতে পারে বাংলাদেশ। এ সুযোগে পোশাকের ন্যায্যমূল্য আদায় ও বাজার বিস্তৃত করার এখনই সুযোগ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

ইনামুল হক খান বলেন, ‘ভারত অবাস্তব এক লেভেলে পৌঁছে গেছে। এটার সুফল বাংলাদেশ অবশ্যই পাবে। চীন এরই মধ্যে অকওয়ার্ড পজিশনে আছে। চীনের অর্ডারগুলো বেরিয়ে আসছে। আমরা ভালো অবস্থানে আছি।’

বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ‘যদিও ভারতের র ম্যাটেরিয়ালসের প্রাইস আমাদের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম আমাদের থেকে, তারপরও যেহেতু ৫০ শতাংশ ট্যারিফ দেয়া হয়েছে। ভারত আর আমাদের সঙ্গে কম্পিটিশনে থাকবে না ইউএস মার্কেটে। এখন আমাদের যারা উদ্যোক্তা আছি, তাদের ভালো নেগোসিয়েশন স্কিলটা প্রমাণ করতে হবে। বাইরের দেশ থেকে ন্যায্যমূল্য নেয়ার এখনই সময়।’

বিশেষজ্ঞদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্ক নীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। প্রয়োজন এ সুযোগ কাজে লাগানো।

অর্থনীতিবিদ ড. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘২০২৫ এর জানুয়ারি থেকে জুন বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির ডাবল-ট্রিপল প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। শুল্ক যুদ্ধে বাংলাদেশ যে সুবিধা পাচ্ছে, এই ছয় মাসের প্রবৃদ্ধি কিন্তু তারই ইঙ্গিত।’

অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ভারত এবং চীন যদি রেস্ট্রিকটেড থাকে উচ্চ শুল্কের কারণে, তাহলে আমাদের সুবিধাই হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সুযোগে বাজার আয়তন বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন, লজিস্টিকস এবং গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া।

এসএইচ