ডিএসইর ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম পর্যালোচনা-পুনর্মূল্যায়নের দাবি ডিবিএর

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
পুঁজিবাজার
অর্থনীতি
0

পুঁজিবাজারের স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বরাবর তার কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। একই চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যানকেও পাঠানো হয়েছে।

ডিবিএ তাদের চিঠিতে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের ধারা ৪.১(বি)(আই) সংশোধনের সুপারিশ করেছে। বর্তমান ধারা অনুযায়ী, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ১৩ সদস্যের, যার মধ্যে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক, ৪ জন ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, ১ জন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক এবং ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পদাধিকারবলে) থাকেন। এই পর্ষদের চেয়ারম্যান শুধুমাত্র ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্য থেকে মনোনীত হন।

ডিবিএ অভিযোগ করেছে যে, পর্ষদ গঠনের এই ভারসাম্যহীনতার কারণে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সরকারগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় ডিএসইর পর্ষদ চেয়ারম্যানসহ স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দিতো। এই স্বতন্ত্র পরিচালকদের অনেকেই পুঁজিবাজার-বহির্ভূত খাত থেকে আসায় তাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল না, যার ফলে তারা তথ্যবহুল সিদ্ধান্ত নিতে বা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেননি।

মালিকানা সত্ত্ববিহীন স্বতন্ত্র পরিচালকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পুঁজিবাজার এবং বাজার সংশ্লিষ্টদের স্বার্থের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। ডিবিএ মনে করে, এই বিধান এবং অনুশীলন পুঁজিবাজারকে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক হয়েছে, যা বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দুর্বল করেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে ডিবিএ।

ডিবিএ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের সংশোধনের জন্য তিনটি প্রধান সুপারিশ করেছে:

১. ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ কাঠামোর পুনর্গঠন ও পরিবর্তন:

ডিবিএ সুপারিশ করেছে যে, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ১১ সদস্যের হবে। এর মধ্যে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক, ৪ জন ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, ১ জন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক এবং ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পদাধিকারবলে) থাকবেন। এই ক্ষেত্রে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যতীত অন্য সকল পরিচালক পর্ষদ চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্য হবেন এবং নতুন বোর্ড গঠনের পর প্রথম সভায় পর্ষদ সদস্যদের দ্বারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। এই পরিবর্তনের ফলে ডিএসইর পর্ষদ কাঠামোতে ভারসাম্য আসবে এবং সকল কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে বলে ডিবিএ মনে করে।

২. ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার (সিআরও) রিপোর্টিং কর্তৃপক্ষ হিসেবে ক্ষমতায়ন:

বর্তমানে, ডিএসই বোর্ড ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশন ২০১৩ এর ধারা ১৬(১) এবং ডিএসই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের ধারা ৫.২.২(বি) অনুসারে, প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) সরাসরি রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির (আরএসি) কাছে রিপোর্ট করেন। তবে, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তার প্রশাসনিক রিপোর্টিং থাকলেও, কার্যক্রমে তাকে এমডি/সিইও-এর কাছে রিপোর্ট করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ডিবিএ যুক্তি দিয়েছে যে, এই সমন্বয়হীনতার কারণে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পুঁজিবাজারের রেগুলেটরি বিষয়ে অবহিত থাকেন না, যা বাজার অংশগ্রহণকারীদের সাথে দূরত্ব তৈরি করে এবং আস্থাহীনতা বাড়ায়। ডিবিএ সুপারিশ করেছে যে, ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সিআরও'র রিপোর্টিং কর্তৃপক্ষ হিসেবে গণ্য করা উচিত এবং সকল রেগুলেটরি কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এখতিয়ারে থাকা উচিত। সিআরও তার রিপোর্টিং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির কাছে অব্যাহত রাখবেন।

৩. ডিএসই'র সাংগঠনিক অর্গানোগ্রাম ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম থেকে রহিতকরণ:

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের ৪.৪.৩ (এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা) ধারায় ডিএসইর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও স্থায়ী সাংগঠনিক অর্গানোগ্রামের রূপরেখা দেওয়া আছে। ডিবিএ মনে করে, এটি এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রয়োজনীয় পদ পরিবর্তনকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। তাদের সুপারিশ হলো, এই সাংগঠনিক অর্গানোগ্রাম সংশোধন করার ক্ষমতা কেবলমাত্র ডিএসই বোর্ডের উপর ন্যস্ত থাকা উচিত, যাতে প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়োপযোগী এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

ডিবিএ আশা করছে যে, এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে ডিএসইর কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আসবে এবং পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হবে।

ইএ