ডাকসু নির্বাচন কী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ বা সংক্ষেপে ডাকসু নামে পরিচিত। এটি ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে পূর্বনাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ’ গ্রহণ করা হয়। ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ বলা হয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার বলা হয় এই ছাত্রসংসদকে।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসে গৌরবময় ভূমিকা রাখে এ ছাত্রসংসদ। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করেছে ডাকসু।

ডাকসু নির্বাচন কীভাবে হয়?
ডাকুসর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সভাপতি এবং ১৬ জন ছাত্র প্রতিনিধি থেকে ১০ জন কর্মকর্তা নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়, কোষাধাক্ষের দায়িত্ব পালন করেন একজন শিক্ষক। ২০১৯ সালে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি উপাচার্যসহ এর নির্বাহী কমিটি হবে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট।
১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে ডাকসুর কথা বলা হয়েছে৷ আর ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন হবে। কীভাবে হবে, কাদেরকে নিয়ে হবে, সেগুলো বিস্তারিত বলা আছে গঠনতন্ত্রে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রসংসদ আছে৷ সেখানেও সরাসরি ভোটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে৷
ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে হবে যেভাবে
এবার ডাকসুতে ব্যালটের আকার বেড়েছে, রয়েছে পাঁচ পৃষ্ঠার ব্যালট। আর হল সংসদের জন্য থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট। এ ভোট দিতে হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে। ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি করে পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হবে।
ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর পোলিং এজেন্টকে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। ভোটার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হলে তার লাইব্রেরি কার্ড অথবা পে-ইন স্লিপ দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল আইডি কার্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন।

পরিচয় নিশ্চিতের পর ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দেবেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা। ভোটার তালিকায় নিজের নামের পাশে স্বাক্ষর করবেন ভোটার। এরপর পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার নম্বর জানাতে হবে। ব্যালট নিয়ে ভোটার প্রবেশ করবেন গোপন ভোট কক্ষে। মুঠোফোন বা কোনো ইলেকট্রনিকস ডিভাইস নিয়ে ভোট কক্ষে প্রবেশ করা যাবে না।
ব্যালট পেপার থেকে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর খুঁজে বের করবেন ভোটার। এরপর পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশের ঘরে স্পষ্টভাবে ক্রস চিহ্ন দেবেন ভোটার। পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদান শেষে ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার জমা দেবেন ভোটার।
কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের জন্য দুটি আলাদা ব্যালট বক্স থাকবে। ব্যালট পেপার ভাঁজ না করে সেগুলো নির্ধারিত বাক্সে ফেলে ভোটার তার ভোটদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে, আর ব্রেইল পড়তে পারেন, তাদের জন্য প্রথমবারের মতো এবার ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে যারা ব্রেইল পড়তে পারেন না, তারা আরেকজনের সহযোগিতা নিয়ে অন্য সবার মতোই ভোট দিতে পারবেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দিতে হল থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা পেয়েছে কমিশন।
ডাকসুর ভিপি ও জিএসের তালিকা

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও হল সংসদসমূহের নির্বাচন আজ (২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের ছাত্ররাজনীতিতে প্রথম বৃহৎ নির্বাচনী আয়োজন।

এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি করে পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।