রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে টার্ম কার্ড হয়ে ওঠেছে ক্রিমিয়া। যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইউক্রেনকে অঞ্চলটির দখল ফিরে পাওয়া আশা বাদ দিতেও বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলোচিত সেই অঞ্চলে হঠাৎ করেই রুশ পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। বিশেষ করে ক্রিমিয়ান পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত ইয়াল্টা শহরে যাওয়া ভ্রমণপিপাসুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কৃষ্ণসাগর তীরের এ অংশে প্রত্যেকেই ছুটে এসেছেন গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে। অথচ একটা সময় তারাই অন্য কোনো দেশে যেতেন ছুটির সময় উপভোগ করতে কিংবা ঘুরে বেড়াতেন অন্য কোনো স্থানে।
এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠেছে যুদ্ধের মধ্যে আলোচিত এ অংশেই কেন পা ফেলতে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন রুশ পর্যটকরা? উত্তরে বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এরমধ্যে প্রথমটিই হলো- অঞ্চলটিতে থাকা-খাওয়ার ব্যয় তুলনামূলক সস্তা। বিশেষ করে কৃষ্ণ সাগরের ঝিনুক, পাকা এপ্রিকট এবং তরমুজসহ গ্রীষ্মকালীন খাবারের কম দাম আকৃষ্ট করেছে বলে জানান এক দম্পতি।
তারা বলেন, ‘আমি মনে করি রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলের তুলনায় ক্রিমিয়া বেশ বাজেট-বান্ধব। এই যেমন, এখানকার কিছু বড় রিসোর্টে খুব কম খরচে থাকা যাচ্ছে। মোটামুটি সস্তা আবাসন এবং খাবার পাওয়াসহ সবকিছুই বেশ দুর্দান্ত।’
অনেক পর্যটক বলছেন যে, যুদ্ধের কারণে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞায় সাড়ে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারছেন না তারা। যার কারণে দেশের বিভিন্ন পর্যটন অঞ্চলই তাদের ভরসা। কেউ কেউ বলেছেন, অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি হওয়ায় তাদের কাছে টানে ক্রিমিয়া।
আরও পড়ুন:
একজন পর্যটক বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক কারণে আমরা অনেক দেশেই ঘুরতে যেতে পারি না। এ কারণে কয়েক বছর ধরে আমরা দেশেই ছুটির সময়টা কাটাচ্ছি। আমি ক্রিমিয়ার প্রকৃতি, পাহাড় এবং সমুদ্রের প্রেমে পড়েছি। যুদ্ধের মধ্যেও আমি তিনবার ক্রিমিয়ায় এসেছি।’
খরচ কমানো ও বিদেশ ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা ছাড়াও রাশিয়ান পর্যটকরা এ বছর ক্রিমিয়াকে বেছে নেয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো, গত ডিসেম্বরে কৃষ্ণ সাগরের কার্চ প্রণালীতে রাশিয়ান তেলবাহী ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনা। ১০ হাজার টনের বেশি তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির ক্রাসনোদার অঞ্চলের জনপ্রিয় সমুদ্রতীরবর্তী রিসোর্ট শহর আনাপা'য় পর্যটক সংখ্যা ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এই সুযোগে বেশ জমজমাট হয়ে ওঠেছে ক্রিমিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন ব্যবসা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আমাদের রেস্তোরাঁয় সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার তালিকায় রয়েছে ঝিনুক ও সামুদ্রিক মাছ। আমরা প্রতিদিন শুধু ৩০০ থেকে ৪০০ ঝিনুক বিক্রি করি। এবারের মৌসুমে আমাদের বিক্রি অনেক বেড়েছে। যা আশাও করিনি। জুনের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত পর্যটকদের বেশ আনাগোনা রয়েছে। এ বছর অনেক নতুন পর্যটক আসছে।’
ক্রিমিয়ায় রুশ পর্যটকদের ভ্রমণ চাহিদা বাড়ায় বেশিরভাগ হোটেলে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত শতভাগ বুকিং সম্পন্ন। অক্টোবরও সম্ভবত রুম খালি থাকবে না বলে প্রত্যাশা ক্রিমিয়ার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।