ছেলের মৃত্যুর খবরে বাবার হার্ট অ্যাটাক; দিদারুলের স্মরণে নিউ ইয়র্ক পুলিশের শোকর‍্যালি

জানাজার তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি

শোকর‍্যালির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দিদারুল ইসলামের মরদেহ
প্রবাস
1

নিউ ইয়র্কের মিডটাউনে সোমবার (২৮ জুলাই) গণগুলিবর্ষণে নিহত এনওয়াইপিডি অফিসার দিদারুল ইসলামের মরদেহ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে শত শত পুলিশ সদস্যের শোকর‍্যালির মধ্য দিয়ে ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে মরদেহের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শোকর‍্যালির পর মরদেহ পার্কচেস্টার মসজিদের ফিউনারেল হোমে রাখা হয়েছে। তবে তার জানাজার তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।

এদিকে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিরি খবর, নিহত অফিসার দিদারুল ইসলামের পিতা মুহাম্মদ আব্দুর রব ছেলের সংবাদে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, যা পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা প্রায় ৬টা ৩০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের মিডটাউন ম্যানহাটনের ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউ অবস্থিত একটি অফিস ভবনে বন্দুকধারীর গুলিতে চারজন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হন। হামলাকারী শেন তামুরা, যিনি মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস বহন করতেন, পরে আত্মহত্যা করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তিনি জাতীয় ফুটবল লিগ (এনএফএল)-এর কর্মীদের টার্গেট করছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২৭ বছর বয়সী তামুরা একটি নোটপ্যাডে দাবি করেন যে তিনি সিটিই (ক্রোনিক ট্রমাটিক এনসেফালোপ্যাথি) নামক মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত, যা সম্ভবত তিনি হাইস্কুল ফুটবল খেলায় হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছে তার শরীরে বা ইতিহাসে সিটিইর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং তার এনএফএল-এর সঙ্গে কোনো পরিচয়ও নেই।

তমুরা একটি রাইফেল নিয়ে ভবনের প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করেন। মেয়র এরিক অ্যাডামস জানান, বন্দুকধারী ভুল এলিভেটর ব্যবহার করে ৩৩ তলায় উঠে যান, যেখানে রুডিন ম্যানেজমেন্টের অফিস রয়েছে। তার প্রকৃত লক্ষ্য ছিল একই ভবনের অন্য তলায় অবস্থিত এনএফএল হেডকোয়ার্টার।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বন্দুকধারী একজন নারীকে এলিভেটর থেকে বেরিয়ে যেতে দিয়েছিলেন এবং তাকে গুলি করেননি, তবে নিরাপত্তা প্রহরীকে গুলি করেছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত হলেও কিছু ভুল বা দুর্ভাগ্যের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।

গুলিবর্ষণে নিহত চারজনের মধ্যে ছিলেন ব্ল্যাকস্টোন কোম্পানির এক নির্বাহী নারী, যিনি একজন স্ত্রী ও মা ছিলেন, এনওয়াইপিডি পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম, যিনি বাংলাদেশি অভিবাসী এবং দুই সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ছিলেন গর্ভবতী। এছাড়াও নিরাপত্তা প্রহরী আলান্ড এটিয়েন এবং রুডিন ম্যানেজমেন্টের কর্মচারী জুলিয়া হাইম্যান নিহত হন। এছাড়া এনএফএলের একজন কর্মী গুরুতর আহত রয়েছেন, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও স্থিতিশীল।

পুলিশ জানিয়েছে, তামুরার গাড়ি শনিবার নেভাডা থেকে নিউ ইয়র্কে পৌঁছায়। তার নেভাডায় মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের দুই ইতিহাস রয়েছে, যেখানে তাকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত আটক করা হয়েছিল। তার কাছে গোপন অস্ত্র বহনের লাইসেন্স ছিল এবং একবার অনুপ্রবেশের অভিযোগও ছিল। তামুরা লাস ভেগাসের হর্সশু ক্যাসিনোতে সিকিউরিটি বিভাগের কর্মী ছিলেন এবং বন্দুকের একটি অংশ একজন সহকর্মী কিনেছিলেন। বর্তমানে নিউইয়র্ক পুলিশ লাস ভেগাসে তদন্তের জন্য দল পাঠিয়েছে এবং বন্দুকের উৎস ও অতিরিক্ত গুলির সন্ধান করছে।

নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল গুলিবর্ষণের পর আক্রমণাত্মক অস্ত্র নিষিদ্ধের জন্য জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা শুধু শোক প্রকাশ নয়, কার্যকর আইন চাই।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ঘটনাটির প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন, আইনের প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ নিহত অফিসার দিদারুল ইসলামের আত্মত্যাগকে ‘সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তাকে একজন নায়ক হিসেবে স্মরণ করেছেন।

এ গণরক্তক্ষয়ী হামলা নিউ ইয়র্ক শহর এবং জাতিকে গভীরভাবে শোকাহত করেছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত অব্যাহত রাখছে।

ইএ