প্রবাসী আয় ২৫–২৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে; অদক্ষতা ও সীমিত কর্মসংস্থান বড় কারণ

বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক
প্রবাস
0

বছরে ১০ থেকে ১১ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের সন্ধানে বিদেশে গেলেও প্রবাসী আয় থাকছে ২৫ থেকে ২৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে, যার অন্যতম কারণ অদক্ষতা আর কর্মসংস্থানের সীমিত বাজার। এরপরও চলতি মাসে রেমিট্যান্স আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাকি দিনগুলোতে এ গতি অব্যাহত থাকলে, আগ‌স্ট মাস শেষে রেমিট্যান্স প্রায় আড়াই কোটি ডলার ছাড়াতে পারে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির প্রধান দু’টি উৎসের একটি প্রবাসী আয়। বিএমইটির তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১ কোটি ৪৮ লাখের মতো মানুষ কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। বছরে ১০ থেকে ১১ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের সন্ধানে বিদেশে যাচ্ছেন। প্রবাসে যাবার সংখ্যা বাড়লেও সে অর্থে বাড়ছে না প্রবাসী আয়। বছরে ২৫ থেকে ২৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

অর্থনীতিবিদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি দেশে গিয়ে দেখছি এয়ারপোর্টে ঘাস কাটে, সুইপার, দাড়োয়ান বা ক্লিনারের কাজ করে আমাদের দেশের মানুষ। পাশ্ববর্তী দেশ থেকে যখন লোক পাঠায়, তখন এরা কিছুটা শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশের লোকগুলোর বস হয় এবং তিন থেকে চার গুণ বেতনে কাজ করে।’

গেলো অর্থবছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়নি। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট কিছু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ বৈদেশিক কর্মসংস্থান। প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাময়িক সমস্যা সৃষ্টি হলেই প্রবাসী আয়ে সংকটে পড়ে। তাই বিকল্প বাজার সৃষ্টির কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘অদক্ষ শ্রমিকরাও অল্প সময়ের মধ্যে দক্ষ হয়ে বিদেশে কাজ করছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের লেবারদের ব্যাপক চাহিদা আছে। এর সঙ্গে যদি শুধু ভাষাটা আমরা সম্পৃক্ত করে দেই, তাহলে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বাড়ানো সম্ভব।’

এরইমধ্যে মালয়েশিয়া, ওমানসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্থিতিশীলতায় কমেছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও।

আরও পড়ুন:

যদিও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে স্থবিরতার মধ্যেই বাড়ছে প্রবাসী আয়। চলতি আগ‌স্ট মাসের প্রথম ২৩ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৭৪ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার। দেশিয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতে এ গতি অব্যাহত থাকলে, আগ‌স্ট মাস শেষে রেমিট্যান্স প্রায় আড়াইশো কোটি ডলার ছাড়াতে পারে।

আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিনিয়ত যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে, তাদের শ্রমিকদের পেমেন্ট করার সক্ষমতা অনেকটা কমে গিয়েছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এখন আমাদের দৃষ্টি হচ্ছে কীভাবে এটা আরও বাড়ানো যায় এবং সেটাকে ধরে রাখা যায়।’

রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষ দেশ সৌদি আরব। গেলো কয়েক বছর শীর্ষস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র তালিকায় পঞ্চম স্থানে।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়া সফর শেষে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নেয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আইন মেনে শ্রমিক নিতে এআই পরিচালিত ইউআরপি ও ডিএলআর নামে একটি মডিউল দাঁড় করানো হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হবে প্রায় শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে শ্রমিক যাবে মালয়েশিয়ায়।

এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারসাজি ও সিন্ডিকেট বেঙ্গে শ্রমিক পাঠানো সহজ করতে হবে।

ভ্রমণ ভিসায় বৈধপথে যেয়ে অনেকেই অবৈধ হয়ে পড়েন বিদেশে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো অভিযান চালিয়ে লোক পাঠানো-ই বন্ধ করে দেয়। তাই ভিসা নবায়নের ক্রিয়া সহজ হওয়ার পাশাপাশি দূতাবাসগুলোর প্রবাসী শ্রমিক বান্ধব হওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

এসএইচ