দেশ ভেদে, ব্র্যান্ডভেদে অটোমোটিভ ওয়ার্ল্ডের সবাই সবসময়ই সচেষ্ট ছিল নতুন কিছু নিয়ে আসার। এই নতুন কিছুর পিছনে যতটা ছিল বাজারে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা ততটাই ছিল নিজেদের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
ফোর্ড মডেল টি এর পর হাজারো গাড়ি এসেছে বাজারে গোটা বিশ্বজুড়ে সেই সাথে এসেছে অসংখ্য ইঞ্জিন। তবে এর ভেতর সব ইঞ্জিন সময়ের পরিক্রমায় টিকে থাকেনি, কোন কোন ইঞ্জিন আবার বদলে দিয়েছে গোটা গাড়ির জগতকেই।
আধুনিক গাড়ির জগতকে সবচেয়ে বেশি যে ইঞ্জিনগুলো প্রভাবিত করেছে তার মধ্যে সবার আগে বলতে হবে আমেরিকার শেভ্রলেট স্মল ব্লক ভি এইটের কথা। তাদের এলএস সিরিজের এই ইঞ্জিনটির জন্ম ১৯৫৪ সালে, যাকে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের হার্টবিট। মূলত ১৯৫৫ সালের করভেটের জন্যই টু সিক্সটি ফাইভ কিউবিক ইঞ্চের এ ইঞ্জিনটি তৈরি করেন ইঞ্জিনিয়ার এড কোল।
ওজনে হালকা, কম্প্যাক্ট ডিজাইন এবং আকৃতির তুলনায় শক্তিশালী হওয়ায় এর প্রভাব পড়ে দীর্ঘমেয়াদী। তবে এর সাথে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে এর সিম্পলিসিটি ও রিলায়েবিলিটি। এ ইঞ্জিনে কাজ করা কিংবা মডিফাই করা খুবই সহজ ছিল। তবে পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় এর আকৃতি ও সক্ষমতা দুটোই বাড়ানো হয়।
১৯৭০ সাল নাগাদ এই ইঞ্জিনটি ফ্যামিলি সেডান থেকে শুরু করে মাসল কার, এমনকি জলযানেও ব্যবহার হতে থাকে। ১৯৭৬ সালে এই ইঞ্জিনকে আরো আধুনিক করা হয় যার নাম দেওয়া হয় এলএস ওয়ান। এটি সম্পূর্ণরূপে এলুমিনিয়ামের তৈরি ছিল। ফলে ওজন কমে আসে কিন্তু ইঞ্জিনের সক্ষমতা আরো বেড়ে যায়। এতে যুক্ত করা হয় কয়েল অন প্লাগ ইগনিশন, ড্রাইভ বাই ওয়ার থ্রটল কন্ট্রোলের মতন এডভান্সড টেকনোলজি। আজো এই সিরিজের ইঞ্জিন তৈরি করে শেভ্রলেট।
এরপরেই যে ইঞ্জিনটির কথা বলতে হয় সেটি হলো জার্মানির ভক্সওয়াগনের ওয়ান পয়েন্ট নাইন টিডিআই ডিজেল ইঞ্জিন, যেটি বাজারে আসে ১৯৯১ সালে। ১০৫ হর্স পাওয়ারের এই ইঞ্জিন বাজারে আসার আগ পর্যন্ত ধারণা করা হতো ডিজেল ইঞ্জিন মানেই ধীরগতি, প্রচুর শব্দ এবং শুধুমাত্র ট্রাকের জন্যই ডিজেল ইঞ্জিন যথার্থ।
এতে টার্বোচার্জড ডিরেক্ট ইনজেকশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে কম জ্বালানীতেও বেশী শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হয় ইঞ্জিনটি। এটি মূলত তার বহুমুখী ব্যবহার উপযোগিতার কারণেই বেশী প্রসার লাভ করে। ছোট হ্যাচব্যাক থেকে শুরু করে বড় ফ্যামিলি কার সবকিছুতেই এই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রায় ২০ বছর ধরে এই ইঞ্জিনের প্রোডাকশন চলে। সেই সময়ে এতো ছোট ডিজেল ইঞ্জিনে এতোখানি শক্তি আর কেউ দিতে পারেনি। এছাড়াও অকল্পনীয় জ্বালানী সাশ্রয়ের জন্যও এটি বেশ বিখ্যাত হয়ে ওঠে। চার দশমিক সাত লিটার ডিজেলে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ দিতে সক্ষম ছিল এই ইঞ্জিনটি।
টিউনারদের মাঝেও এই ইঞ্জিন বেশ সাড়া ফেলে। টিউনারদের হাতে এই ইঞ্জিন ২০০ হর্স পাওয়ার পর্যন্ত শক্তি উৎপাদন করে। এই ইঞ্জিনের মূল সার্থকতা বিশ্বজুড়ে ডিজেল ইঞ্জিন নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করায়।
সবশেষ যে ইঞ্জিনটির কথা বলতে হবে সেটি হলো জাপানের টয়োটার জেযি সিরিজ। ১৯৯০ সালে বাজারে আসা এই সিরিজটি মূলত ইনলাইন সিক্স ক্যাটাগরির। বলা হয় এটি টয়োটার ফ্ল্যাগশিপ পারফরম্যান্স পাওয়ার প্ল্যান্ট যেটি বর্তমানে টয়োটার নামের সমার্থক হয়ে গিয়েছে। স্মুদ পাওয়ার ও রিলায়েবিলিটি দেওয়ার জন্যই এর ডিজাইন করা হলেও এটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে তার অবিশ্বাস্য সম্ভাবনার জন্য।
টয়োটা জেযি সিরিজে ক্যাটাগরি ভিত্তিক বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন নিয়ে আসে। ন্যাচারালি এস্পিরেটেড ওয়ান জেযি ও টু জেযি জিই, টার্বোচার্জড ওয়ান জেযি জিটিই ও আইকনিক টু জেযি জিটিই। টয়োটা বিশ্বজুড়ে তার প্রায় ১৫টি মডেলে এই সিরিজের ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে হ্যাচব্যাক থেকে শুরু করে স্পোর্টস কার রয়েছে।
টয়োটার এই ইঞ্জিন এতো বেশি বৈপ্লবিক হবার কারণ এই ইঞ্জিনটি ওভার ইঞ্জিনিয়ার্ড। এর আয়রন ব্লক ইঞ্জিন বিশাল শক্তি বৃদ্ধির চাপ নেওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। ফ্যাক্টরি স্টক টু জেযি জিটিই থ্রি টুয়েন্টি হর্স পাওয়ারের হলেও মডিফাই করলে এর থেকেই ওয়ান থাইউজেন্ড হর্স পাওয়ারের বেশি আউটপুট পাওয়া যায়।