কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি আসলেই মানুষের বিকল্প হতে পারে?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
প্রযুক্তি সংবাদ
তথ্য-প্রযুক্তি
0

প্রযুক্তির উৎকর্ষ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে অনেক কাজ করে দিচ্ছে মেশিন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির জন্য যেভাবে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, তেমনি তার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিয়ে রয়েছে নানা শঙ্কা। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবল শঙ্কা তৈরি করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। অনেককিছু করার ক্ষমতা থাকলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী আসলেই মানুষের বিকল্প হতে পারে?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে চরম উৎসাহ ও ভয়—দুটোই রয়েছে। চ্যাটজিপিটি, জিমিনি বা অন্যান্য এআই টুলগুলো এতটাই শক্তিশালী যে তারা মুহূর্তে কবিতা লিখতে পারে, কোড করতে পারে, এমনকি পরীক্ষাও দিতে পারে। বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি দিন দিন আরো উন্নত হতে থাকে তাহলে তা মানবজাতির বহুমুখী বিপদের কারণও হতে পারে। কিন্তু এই সব কিছু সত্ত্বেও, একটি প্রশ্ন জাগে। মানুষের মস্তিষ্ক কী এআইয়ের চেয়েও উন্নত?

একজন মানুষের মস্তিষ্ক মাত্র ১২ ওয়াট শক্তি ব্যবহার করে। যা একটি ছোট লাইট বাল্বের চেয়েও কম। সুইজারল্যান্ডের ব্লু ব্রেইন প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তাপ্রক্রিয়া অনুকরণ করতে এআইয়ের প্রায় ২.৭ বিলিয়ন ওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন! তার মানে হচ্ছে, আমাদের মানুষের বুদ্ধিমত্তা এআইয়ের তুলনায় অনেক বেশি এনার্জি সাশ্রয় করে। এবং অনেক দিক থেকেই এগিয়ে।

এই তুলনা কেবল শক্তির দিক থেকে নয়, মানসিক ক্ষমতার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিশু, যখন ভাষা শেখে তখন এই ভাষাকে আয়ত্ত করতে লাখ লাখ উদাহরণ প্রয়োজন হয় না। বরং তারা পরিবেশ, অভিজ্ঞতা ও আবেগের মাধ্যমে শেখে। শিশুরা একমাত্র শব্দ নয়, শব্দের অর্থ, বাচনভঙ্গি এবং অনুভবও শেখে।

সেদিক দিয়ে এআই শুধু তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে পারে, কিন্তু সে অনুভব করতে পারে না। একজন মানুষ কল্পনা করতে পারে, অনুভব করতে পারে, এবং নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। দাবা খেলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের হারিয়ে দিতে পারে। অপরদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন প্রেমপত্র লিখতে পারে না যা আমাদের আবেগাপ্লুত করে দিবে।

মানুষের চিন্তাভাবনায় থাকে যুক্তি, অনুভূতি, ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতা। যা কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে অনুকরণ করা সম্ভব নয়। এমনকি কল্পনার ক্ষেত্রেও মানুষ অনেক এগিয়ে। আমরা স্বপ্ন দেখতে বা এমন জিনিস কল্পনা করতে পারি যা কখনও চোখে দেখিনি। অনুভব করতে পারি এমন অনুভূতি, যা শব্দে ব্যাখ্যা করা যায় না। এই জায়গাগুলোতে এআই এখনো অনেক পিছিয়ে কিংবা কখনই সে জায়গায় পৌঁছতে পারবে না।

মানুষ হিসাবে আমরা শুধু তথ্য বিশ্লেষণ করি না, আমরা ভালোবাসি, স্বপ্ন দেখি, আত্মসমালোচনা করি এবং ভবিষ্যৎ কল্পনা করি। এগুলো কোনো এআই এখনো করতে সক্ষম নয়। আমরা যতোই আধুনিক এআই তৈরি করি না কেন, মানব মস্তিষ্কের গভীরতা, গুণ, এবং সংবেদনশীলতা এখনো তুলনাহীন। তাহলে কেন আমরা নিজেদেরকে এআইয়ের তুলনায় দুর্বল ভাবি? ১২ ওয়াটের এই ‘মানব মস্তিষ্ক’ সৃষ্টির সবচেয়ে অসাধারণ জিনিস।

সেজু