যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুর্লভ খনিজ চুক্তি সই করেছে ইউক্রেন

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুর্লভ খনিজ চুক্তি সই করেছে ইউক্রেন। বিপরীতে কিয়েভ পুনর্গঠনের জন্য বিনিয়োগ তহবিলে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে ওয়াশিংটন। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধে খরচ হওয়া অর্থ সহজেই ফেরত আনতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও খনিজ চুক্তি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি রাশিয়া।

টানা কয়েকমাসের দেনদরবার ও তর্ক যুদ্ধ শেষে অবশেষে ট্রাম্পের কাছে হার মানলেন জেলেনস্কি। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুর্লভ খনিজের চুক্তিতে সই করতে বাধ্য হলো ইউক্রেন।

বুধবার ওয়াশিংটনে চুক্তি সইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী ও ইউক্রেনীয় ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার। এক ভিডিও বার্তায় মার্কিন অর্থমন্ত্রী জানান, চুক্তিটি নির্দেশ করে স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেন বিনির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ট্রাম্প প্রশাসন। পাশাপাশি রাশিয়াকে সাহায্যকারী কোনো দেশ বা ব্যক্তিকে এই চুক্তির ফল ভোগ করতে দেয়া হবে না বলেও অঙ্গীকার করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ইউক্রেনীয় সরকারের সঙ্গে তহবিল তৈরিতে সহায়তা করবে। চুক্তিটি রুশ সরকারকে জানান দিচ্ছে, ইউক্রেনে শান্তি স্থাপনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ট্রাম্প প্রশাসন। যার মূল উদ্দেশ্য স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেন তৈরি। নিষ্ঠুর ও অযৌক্তিক যুদ্ধ শেষ করার সময় চলে এসেছে।’

ইউক্রেনের মাটির নিচে লুকিয়ে আছে বিশ্বের ৫ শতাংশ দুর্লভ খনিজ। যার মধ্যে অন্যতম ইউরেনিয়াম, লিথিয়াম, টাইটানিয়াম, গ্রাফাইট এমনকি গ্যালিয়ামের মতো মূল্যবান সম্পদ। চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ৫০ শতাংশের মালিকানা পাবে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও কোথায় খনন করা হবে, তা নির্ধারণ করবে কিয়েভ।

বিপরীতে ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য তহবিলে বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনীয় ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার। এক্সে দেয়া এক পোস্টে জানান, সরাসরি আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি কিয়েভের জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ সামরিক সহায়তা প্রদান করবে ওয়াশিংটন।

এদিকে চুক্তি সইয়ের আগ মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, শেষ মুহূর্তে চুক্তিতে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলো ইউক্রেন। জানান, চুক্তির মাধ্যমে তিন বছর ধরে কিয়েভকে প্রদান করা সহায়তার অর্থ ফেরত আনতে পারবে ওয়াশিংটন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এই জটিল চুক্তি করতে চাচ্ছিলাম না। কারণ ইউক্রেনের কাছে অর্থই নেই। তাদের খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। তবে সম্ভবত করুণাবশত আমি কিছুটা বোকা হয়েই রাজি হয়েছি। তাদের কাছে ভালো দুর্লভ খনিজ সম্পদ রয়েছে; যা আমাদের কাছে চুক্তির জন্য গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।’

এদিকে, খনিজ চুক্তি সইয়ের পর স্বভাবতই আলোচনায় উঠে আসছে যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ। ক্রেমলিন মুখপাত্র জানান, শান্তির জন্য সবসময় রুশ প্রেসিডেন্টের দরজা খোলা। এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা অব্যাহত রেখেছে মস্কো। যদিও এখন পর্যন্ত আগ্রাসী মনোভাবেই রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্টের দাবি, কুরস্কের প্রায় সম্পূর্ণ অঞ্চল পুনর্দখল করেছে সেনারা।

ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘কুরস্কের কিছু অঞ্চলে ইউক্রেনীরা লুকিয়ে আছে। আমরা তাদের আটক করছি। অনেকেই আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছেন। তাদের আমাদের হেফাজতে রেখেছি। যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনারা সফলতা দেখাচ্ছেন।’

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘শুরু থেকেই শান্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তবে ইউক্রেনীয়রা যুদ্ধ চেয়েছিলো। তাই জাতীয় সুরক্ষা নিশ্চিতে আমাদের সামরিক অভিযান শুরু করতে হয়। তবে এখনো প্রেসিডেন্টের নির্দেশে অস্ত্রবিরতির জন্য আমরা আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।’

যদিও সীমান্তের দুইপাশে পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার রাশিয়ার ড্রোন তাণ্ডব চালিয়েছে ওডেসা ও দিনিপ্রো অঞ্চলে। বিপরীতে বেলগোরোদে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

এসএস