ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রপ্তানি নির্ভর দেশগুলোর মধ্যে বেড়েছে অস্থিরতা। শুল্কহারের ওপর ভর করে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত দেশগুলো। তবে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপাকে পড়েছে ভারত। তাদের কাঁধে চেপেছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক। যা প্রতিযোগী অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
অতিরিক্ত শুল্কের চাপে এরইমধ্যে ভারতের তৈরি পোশাক খাতসহ রপ্তানি বাণিজ্য পড়েছে হুমকির মুখে। ভারতের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনায় জরিমানা হিসেবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নয়াদিল্লির ঘাড়ে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেন ট্রাম্প। আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে সমঝোতায় না আসলে ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে গুণতে হবে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক।
ভারতের পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠান পার্ল গ্লোবাল এরইমধ্যে তাদের ১৭টি কারখানার কার্যক্রম বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও গুয়াতেমালায় সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাদের পোশাকের ক্রেতা মূলত যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাপ ও কোলসের মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। বাড়তি শুল্কের বোঝা প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছেন ক্রেতারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের বাইরে উৎপাদন সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয় পার্ল গ্লোবাল প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানান, শুল্কের বোঝা প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা বহন করলেই ক্রয়াদেশ বহাল রাখবেন ক্রেতারা। যদিও তা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়।
পার্ল গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভারতের ওপর কী পরিমাণে শুল্ক ধার্য হবে বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। ৫০ শতাংশ শুল্কহার পরিবর্তন হতে পারে। তবে প্রতিযোগী অন্য দেশগুলোতে শুল্কহার নিশ্চিত। এ মুহূর্তে মার্কিন ক্রয়াদেশ পূরণে ভারতকে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। এজন্য ভারতের বাইরে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
ভারতীয় পোশাক খাত আগে থেকেই শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে সমস্যায় ভুগছে। এখন মার্কিন শুল্কের বোঝা ও ক্রেতাদের চাপে বড় ক্ষতির মুখে পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো। ভারতের অভ্যন্তরের কারখানাগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাই কারখানার জন্য বিকল্প দেশ খুঁজে বেড়াচ্ছে তারা।
এদিকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা জানিয়েছে চীন। ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত নয়াদিল্লির ওপর আরোপিত ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামি বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার মতে, শুল্ককে হাতিয়ার বানিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মকে অবজ্ঞা করেছেন ট্রাম্প।
শুল্ক ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে আর কোনো ধরনের আলোচনায় যেতেও রাজি নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওভাল অফিস জানিয়েছে, শুল্ক নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বাণিজ্য আলোচনা।
মার্কিন শুল্ক নিয়ে এরইমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্কের বিষয়ে আলোচনা করেন দুই নেতা। মার্কিন শুল্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিল ও ভারত।