ইরান-ইসরাইল সংঘাত: হুমকিতে জ্বালানি তেল বাণিজ্যের জলপথ হরমুজ প্রণালি

বিদেশে এখন , মধ্যপ্রাচ্য
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

ইরান-ইসরাইল সংঘাতের জেরে হুমকিতে পড়েছে জ্বালানি তেল বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হরমুজ প্রণালি। ইরান হুমকি দিয়েছে, বন্ধ করে দিতে পারে এই জলপথ। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান আর ইরানের মধ্যে অবস্থিত পারস্য উপসাগর আর গাল্ফ অব ওমানের সংযোগ স্থাপনকারী এই জলপথ বন্ধ হলে আরও বাড়বে জ্বালানির দর। সংঘাতের জেরে এখন পর্যন্ত সাত শতাংশ বেড়েছে জ্বালানির দাম।

পারস্য উপসাগরে প্রবেশের একমাত্র সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালি। এই প্রণালীর একপাশে ইরান, অন্যপাশে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ৩৯ কিলোমিটারের এই প্রণালি পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে গাল্ফ অব ওমানকে আর আরব সাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ২০ শতাংশ বা আনুমানিক এক কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয় এই প্রণালি দিয়ে। বিশ্বে জ্বালানি তেল সরবরাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও পরিচিত এই প্রণালি। ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত এই জলপথ কোথাও কোথাও এতো সরু যে, হামলা আর হুমকি আতঙ্কে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই প্রণালি।

১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান সংঘাতের সময় দুই দেশের বহু মানুষের মৃত্যু হয়। গাল্ফ উপকূলে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতেই হামলা হয়। পরে এই যুদ্ধ ট্যাঙ্কার ওয়ার নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু কখনই হরমুজ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ উপকূলে চারটি জাহাজে হামলা হয়, যখন ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল।

যেকোনো সংঘাতের সময় বরাবরই টার্গেট হয় জাহাজ চলাচলের জলপথগুলো। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা হরমুজ প্রণালীর ঠিক উল্টো দিকে লোহিত সাগরের বাব আল মানদেব প্রণালীর জাহাজগুলোতে হামলা চালায়। সেসময় থেকে বিশ্ববাণিজ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারণ জাহাজগুলো লোহিত সাগর হয়ে আফ্রিকা যেতে পারেনি। কিন্তু হরমুজ প্রণালি ব্যবহার না করলে গাল্ফভুক্ত দেশগুলোর জাহাজ আরব সাগরে যেতেই পারবে না।

গাল্ফভুক্ত যে দেশগুলো পেট্রোল আমদানি করে না, সমস্যায় পড়বে সেই দেশগুলোও। কারণ হরমুজ প্রণালি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ব্যাহত হয়ে ব্যারেল প্রতি অস্বাভাবিক বেড়ে যাবে জ্বালানি তেলের দর। ইসরাইল – ইরান সংঘাতের জেরে সম্প্রতি তেহরান হুমকি দেয়, বিশ্ববাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালি বন্ধ করে দেবে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। এই প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না, পকেটকাটা পড়বে সাধারণ মার্কিনদের।

এসএস