পৃথিবীর আলো দেখতে না পাওয়া এক শিশুর জামা কাপড় বুকে জড়িয়ে কাঁদছেন ফিলিস্তিনের হামিম আল রিফি। কিছুক্ষণ আগেই ধ্বংসস্তূপ থেকে খুঁজে বের করেছেন এই পোশাক।
চারপাশে ধ্বংসস্তূপ ঘিরে গাজা শহরের দার আল আকরাম স্কুল ভবনের আশ্রয়কেন্দ্রে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বোন আর মাকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইসরাইলি হামলায় শেষ হয় গেছে সব। কোথায় আশ্রয় নেবেন, জানা নেই তার।
ফিলিস্তিনের হামিম আল রিফি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর এক মাস আগে বোনের বিয়ে হয়, ও অন্তঃসত্ত্বা ছিল। বাচ্চার জন্মের জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু ইসরাইলি হামলায় বাচ্চাটা পেটেই মারা গেছে। যে বাচ্চাটা পেটেই মারা গেলো, ওর কি দোষ?’
ধ্বংসস্তূপের মাঝে খেলতে থাকা ছয় বছর বয়সী শিশু ঘাদা দাবেবেচ ইসরাইলের বর্বর হামলার শিকার হয়েছে কিছু বুঝে ওঠার আগেই। আঘাতের কারণে তার ডান হাতটি কেটে ফেলতে হয়েছে। বাবা আহমেদ দাবেবেচ অপেক্ষা করছেন, কখন সীমান্ত খুলে দেয়া হবে আর চিকিৎসা শুরু হবে মেয়ের।
শিশু ঘাদা দাবেবেচ বলেন, ‘স্কুলে খেলছিলাম। হঠাৎ করে বোমা হামলা হলো, আমি হাতে আঘাত পেলাম। পরে আমার হাতই কেটে ফেলা হয়েছে।’
বাবা আহমেদ দাবেবেচ বলেন, ‘কোনো আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল, স্কুল, বাসা কিছুই নিরাপদ না। তারা কীসের জন্য অপেক্ষা করছে? কি করতে চায় তারা? আমাদের বাচ্চাদের জন্য তো নিরাপদ আর কোনো জায়গা রইলো না।’
শিশুদের জন্য গাজাকে পুরোপুরি নরকে পরিণত করেছে ইসরাইল। যারা হয়তো জানেও না ঠিক কি কারণে তাদের পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরাইলি বাহিনী। স্কুলে খেলতে থাকা অবস্থায় শিশুদের ওপর নারকীয় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। কারো প্রাণ যাচ্ছে, কেউ হয়ে যাচ্ছে চিরদিনের জন্য পঙ্গু। যেন গোটা প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দিতেই উপত্যকায় নতুন উদ্যমে আগ্রাসন শুরু করেছে আইডিএফ।
হৃদয় ভেঙে দেয়ার মতো সীমাহীন এমন কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গাজার নিষ্পাপ শিশুরা। যারা জানেও না, কীসের জন্য তাদের জন্মভূমিতে হামলা হচ্ছে। প্রতিটি ঘণ্টা হামলা আতঙ্কে পার করে খাবারের জন্যও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। পেটের দায়ে একটা রুটি আর এক বাটি ডালের জন্য এই হুড়োহুড়ি উপত্যকার নিত্যদিনের ঘটনা। কারণ ইসরাইল গাজায় ত্রাণও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘বেকারিগুলো বন্ধ। খাওয়ার কিছু পাচ্ছি না। দাতব্য সংস্থায় এসেছি খাবারের জন্য। পুরো বিশ্বকে বলছি, আমাদের পাশে দাঁড়ান, এখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে।’
আরেকজন বলেন, ‘আমরা ক্ষুধায় মরে যাবো। মানুষ একজন আরেকজনকে খাওয়া শুরু করবে। এক টুকরা রুটির জন্য একজন আরেকজনকে মেরে ফেলবে। কারণ এক টুকরা রুটি জোগাড় করাই কঠিন হয়ে গেছে।’
বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা বলছেন, গাজাকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে ইসরাইল আর যুক্তরাষ্ট্র। সারাবিশ্বের চোখের সামনে প্রতিদিনই ধ্বংস হচ্ছে গাজা। বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আর ডোনাল্ড ট্রাম্প, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দুই নেতার বৈঠকের মধ্য দিয়ে গাজায় নির্মমতা আরও বাড়বে, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উৎখাতের পরিকল্পনা সফল হবে না।