দুধ আর বিষে রয়েছে যোজন যোজন ব্যবধান। দেহে পুষ্টি ও প্রোটিনের অন্যতম যোগানদাতা দুধ হলেও বিষ বরাবরই প্রাণনাশক।
শুনতে অবাক লাগলেও এই দুধ থেকেই বিষ বা ভেনম উৎপাদন করা হচ্ছে। তাও কোন পশ্চিমা বা উন্নত দেশে নয়, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার একদল গবেষকের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে এই গবেষণা। বিশ্ববাজারে যা মোটাদাগে অর্থ উপার্জনেরও সবুজ সংকেত দিচ্ছে।
নাইজেরিয়া তথা আফ্রিকার বৃহত্তম শহর লাগোসের একটি খামারে বিষ তৈরির প্রধান কাঁচামাল বিচ্ছুর দুধ দোহন করা হয়। এরপর উৎপাদনের জন্য চলে প্রক্রিয়াকরণের কাজ।
খামারটিতে ১০ হাজারেরও বেশি বিচ্ছু থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যা পরবর্তীতে ভেনমে রূপান্তরিত হয়। একবছর আগে শুরু হয় এই খামারটির যাত্রা।
এক গ্যালনে প্রায় সাড়ে তিন লিটারের মতো দুধ বা বিষ থাকে। যার বাজারমূল্য প্রায় দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোটা অঙ্কের অর্থ পাওয়ার আশায় স্থানীয় কৃষক ভয়ংকর এই প্রাণীটিকে তাদের ব্যবসায় ব্যবহার করছে। তাই নিয়ম করে মাসে অন্তত দুইবার দুটি প্রজাতির বিচ্ছু থেকে দুগ্ধ আহরণ করেন তারা।
ফার্মাসিউটিক্যালস, বায়োটিক ও নানা ধরনের প্রসাধনী শিল্পে এই ভেনমের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে ওষুধ ও বিভিন্ন লাবণ্য জাতীয় পণ্য।
এই খাতে উচ্চ লাভের সম্ভাবনা থাকলেও প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। ফলে এ ধরনের ব্যবসাকে বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খামার ব্যবস্থাপক উসমান বলেন, 'উৎপাদনের পর আমরা তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবো। তাদের খাওয়াবো, লালন পালন করবো এবং পরবর্তী বিষ আহরণের আগে তাদের প্রস্তুত করবো। বিশ্ববাজারে বিক্রির মতো বিষ উৎপাদন না করা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো।'
বিষ একটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করে বিশ্ববাজারের জন্য প্রস্তুত করা হয়। যেখানে বিক্রি করা অনেকাংশে লাভজনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ন্যানোটেকনোলজির আবির্ভাবের ফলে সময়ের সাথে সাথে বিচ্ছু পালনের লাভজনকতায় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও গবেষক হাম্মেদ ফালেক বলেন, 'অদূর ভবিষ্যতে আমাদের কাছে প্রচুর ডেটাবেজ থাকলে বিশুদ্ধ যৌগগুলো ল্যাবে একত্রীকরণ করতে পারলে কৃষকের কাছ এটি সংগ্রহের চাহিদা কমবে। এতে দামও কমে আসবে।
তবে অর্থনীতির চাকা সচলের প্রবল সম্ভাবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে বিক্রি করার মতো এক গ্যালন বিষ সংরক্ষণ করতে পারেনি খামারটি।