এককভাবে যুক্তরাষ্ট্র দেশিয় তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। বিদায়ী অর্থবছরে দেশটিতে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন বা ৮৭৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যদিও ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছেন মর্কিন ক্রেতারা।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের দেয়া ক্রয়াদেশ আপাতত স্থগিত রাখতে বলছেন বেশ কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ ইঙ্গিত দিয়েছেন বাড়তি শুল্কের বোঝা বইতে হবে রপ্তানিকারককে। যা এই শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। উচ্চ শুল্ক বহাল থাকলে অর্ডার বাতিল কিংবা পোশাকের মূল্য কমিয়ে দেবে ক্রেতা এমন শঙ্কায় ভুগছেন রপ্তানিকারকরা।
বিজিএমইএয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এখন বায়াররা যে অর্ডার করছে তা একটা কন্ডিশন দিয়ে প্লেস করছিল। ট্যারিফ ইস্যুর উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তারা বলছে আমি অর্ডার দিচ্ছি কিন্তু ইউএস ট্যারিফ তোমাদের দিকে না থাকে তখন এইটা তোমাদের ক্যারি করতে হবে। এইটা ক্যারি করার সামর্থ্য তো আসলে এই সেক্টরের নেই।’
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। নতুন ঘোষণা কার্যকর হলে গড়ে শুল্ক দাঁড়াবে ৫১ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্ধিত শুল্ক হার বহনের সক্ষমতা নেই রপ্তানিকারকদের।
এটি কার্যকর হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে তৈরি পোশাক খাত। স্বাভাবিকভাবে কম মূল্যের বাজারে ঝুঁকবে ক্রেতা। ফলে বন্ধ হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর তৈরি পোশাক কারখানা। চট্টগ্রাম থেকে মার্কিন বাজারের ৬০ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হওয়ায় বেশি বিপদে পড়বেন এখানকার উদ্যোক্তারা।
বিজিএমইএয়ের পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘যে অর্ডারগুলো রানিং আছে সেগুলো যদি বায়ার বলে বাড়তি ট্যারিফ তোমাদের বহন করতে হবে নাহলে আমার পণ্য নিবো না। সেক্ষেত্রে এইটা পুরোটা আমার ওপর এসে পড়বে এবং ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েও যেতে পারে। কারণ এইটা বহন করার অবস্থায় আমরা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরে রাখতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সাথে মার্কিন বাজারে শুল্ক হারে সমতা রাখতে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান ব্যবসায়ীদের।
ক্লিফটন গ্রুপের এ এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এইটার যদি কার্যকরী পদক্ষেপ না নেই তাহলে আমেরিকাতে যে ৯ বিলিয়ন ডলারে বিজনেস রয়েছে সেটা ৩ বিলিয়ন ডলারে চলে আসবে। যারা আমরা আমেরিকা বিজনেস করি তাদের কিন্তু হুট করে নতুন বাজারে প্রবেশ করার অপশন নেই।’
বিশ্ববাজারে রপ্তানির দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। তবে প্রধান প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও ভারতীয় পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক হার কম হওয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ।