পেহেলগাম হামলা: ফের বাণিজ্য যুদ্ধে ভারত-পাকিস্তান

সীমান্তরেখা, ভারত-পাকিস্তানের পতাকা
বিদেশে এখন
0

২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামার পর গেল ২২ এপ্রিল পেহেলগামে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা ইস্যুতে আবারও ভারত-পাকিস্তানের বাণিজ্য যুদ্ধ তুঙ্গে। তবে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে পাকিস্তানি পণ্য আমদানি করছে ভারত। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের তথ্য বলছে, বাণিজ্য বন্ধের মধ্যেও অন্তত ৫০ কোটি ডলার মূল্যের পাকিস্তানি পণ্য ভারতের বন্দরে নোঙর করেছে।

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে গেল ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ ইসলামাবাদবিরোধী নানা পদক্ষেপ নেয় নয়াদিল্লি। বিপরীতে সিমলা শান্তি চুক্তি স্থগিতসহ বেশকিছু পাল্টা পদক্ষেপে নয়াদিল্লির চোখ রাঙানির কঠোর জবাব দিচ্ছে ইসলামাবাদ।

দুই সপ্তাহের পাল্টা-পাল্টি পদক্ষেপে চলমান উত্তেজনায় প্রকোট হচ্ছে যুদ্ধের শঙ্কা। এরমধ্যেই আবারও আলোচনায় দুদেশের বাণিজ্য যুদ্ধ। অন্যান্য পদক্ষেপের মতো এটিকেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে ভারত।

তৃতীয় দেশের মাধ্যমেও পাকিস্তানি পণ্য ঢুকতে দেবে না বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। এতে দুদেশের সম্পর্কের বৈরিতা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতের ব্যবসায়ীদের কথা থেকে এমনটাই আভাস মিলছে, ফলে ছড়াচ্ছে উত্তাপ।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘কোনও দেশেরই পাকিস্তান থেকে পণ্য কেনা উচিত নয়। পাকিস্তান আমাদের কাছ থেকে অর্জিত অর্থ জঙ্গিবাদ তৈরিতে ব্যবহার করে। এতে আমাদেরই ক্ষতি হয়।’

আরেকজন বলেন, ‘আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। পরশু আমরা আবেদন করেছিলাম, দুবাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের সাথে সব বাণিজ্য স্থগিত করা উচিত।’

যদিও, বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণার পরও অন্তত ৫০ কোটি ডলার মূল্যের পাকিস্তানি পণ্য ভারতের বন্দরে নোঙর করেছে। তবে তা সরাসরি নয়; সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলঙ্কার মতো তৃতীয় দেশগুলোর মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে যাচ্ছে এসব পণ্য।

সূত্রের বরাত দিয়ে এমন তথ্য তুলে ধরেছে খোদ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই। এসবের মধ্যে ছিল ফল, শুকনো খেজুর, চামড়া এবং টেক্সটাইল পণ্য।

আরো পড়ুন:

তবে পাকিস্তানের পরিচয় লুকিয়ে পণ্যগুলোর নথিতে অন্য দেশের পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। এমনকি নতুন ব্র্যান্ডের মোড়কে এসব পণ্য ভারতে চড়া দামে বিক্রির পাঁয়তারা চলছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পাকিস্তানের ফল, বাদাম ও জৈব রাসায়নিক পণ্যসহ বেশকিছু পণ্যের ওপর প্রতি বছরই নির্ভরশীল ভারত। তেমনি ভারত থেকে ওষুধ, পেট্রোলিয়ম, শাকসবজি, মশলাসহ ইত্যাদি পণ্য আমদানি করতে হয় পাকিস্তানকে। এ অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করায় উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

এদিকে, খাদ্য সরবরাহের ঘাটতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের খাদ্যমন্ত্রী আকবর ইব্রাহিম। চলছে রেশন বিতরণ কার্যক্রম। তবে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘এই রেশন, যুদ্ধের কারণে নয়। এটি নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। এটি সব বাড়ির জন্য। এখানে যুদ্ধের শঙ্কা ঘিরে কোনও প্রভাব নেই।’

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ নতুন নয়। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২শ শতাংশ আমদানি শুল্ক কার্যকর করে ভারত। ফলে সরাসরি আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলেও আমদানি গতি বাড়ায়নি ভারত।

পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তানে ভারতের রপ্তানি ছিল ৪৪ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের। অন্যদিকে, পাকিস্তান থেকে ভারতে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ লাখ ডলার।

সেজু