গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের নতুন ত্রাণ মডেল

খাবারের সন্ধানে শিশুসহ ফিলিস্তিনের অধিবাসীরা
বিদেশে এখন
0

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার বিরোধিতার মধ্যেই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করলো যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন। সহায়তার নতুন এই মডেলে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকছে সশস্ত্র বাহিনী। এই কার্যক্রমের আওতায় নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে সবাইকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে হবে। নতুন এই কার্যক্রমকে সামরিক ও রাজনৈতিক তকমা দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে অনেক দেশ।

হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরির অভিযোগ এনে মানবিক সহায়তার ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইসরাইল। বিকল্প সহায়তা কার্যক্রম হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ গড়ে তুলে ইসরাইল। প্রায় তিন মাসের অবরোধে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে গাজার লাখ লাখ বাসিন্দা।

এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনির হাতে সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়েছে জিএইচএফ সংস্থা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উপত্যকাজুড়ে মোট চারটি সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যার বেশিরভাগই ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চল। এরইমধ্যে ১০ কোটি ডলারের বেশি তহবিলও পেয়েছে সংস্থাটি। তবে অর্থের উৎস এখনও অজানা।

সহায়তার নতুন এই মডেলে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকছে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে। প্রতিদিন সীমিত খাবার সরবরাহ করা হবে। সবাইকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে ত্রাণ। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নেই বলে এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন ফাউন্ডেশনটির নির্বাহী পরিচালক জ্যাক উড। এখন এটি কার তত্ত্বাবধানে চলবে তা স্পষ্ট নয়।

টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ওয়ার্ল্ড পিস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যালেক্স ডি ওয়াল বলেন, ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন আক্ষরিক অর্থেই কয়েকদিনের মধ্যেই ধসে পড়বে। ধারণাটি ইসরাইলের, তবে এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি বেসরকারি খাতের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তবে অর্থায়নের বিষয়ে নেই কোনো স্পষ্ট তথ্য। এছাড়া, ত্রাণ বিতরণেও পেশাদার কর্মীরা জড়িত নয়।’

জিএইচএফ’র নথি বলছে, প্রাথমিকভাবে চারটি কেন্দ্রের প্রতিটি থেকে প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দাকে খাবার দেয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে গাজার ২০ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণ করবে সংস্থাটি। যদিও মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ, ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের নিয়ে রাজনীতি করছে ফাউন্ডেশনটি।

সেভ দ্য চিলড্রেনের আন্তর্জাতিক মানবিক নীতির প্রধান আলেকজান্দ্রা সাইয়েহ বলেন, ‘যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহারী মানুষদের ব্যবহার করা একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ। গাজার প্রতিটি শিশু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানকার প্রতিদিনের চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। জীবন বাঁচানোর জন্য তারা যা পাচ্ছে তাই খাচ্ছে।’

জাতিসংঘের অভিযোগ, ইসরাইল ত্রাণ কার্যক্রমকে সামরিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের নির্ধারিত লোকজনদেরই সহায়তা দেবে। যা মানবিক নীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। ত্রাণ বণ্টনে নেই স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা। তাই তাদের কার্যক্রমকে সমর্থন করছে না আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

এদিকে জিএইচএফ-এর দাবি স্বাধীন ও অরাজনৈতিক উদ্দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এসএস