দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসের মসনদে বসেই বিতর্কের মুখেই বিভিন্ন ইস্যুতে একের পর এক কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসীদের বিতাড়িত করার পর এবার বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর খড়গ চালাচ্ছেন তিনি। এরইমধ্যে বিশ্বজুড়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বিশাল অঙ্কের তহবিল ও অর্থায়ন আটকে দেন ট্রাম্প। প্রতিবাদে এরইমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হার্ভার্ড প্রশাসন।
এবার ট্রাম্পের চোখ পড়েছে দেশটিতে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীদের উপর। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হবে। শুধু তাই নয়, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত বা সংবেদনশীল বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে বলেও জানানো হয়। রুবিওর এমন ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের অন্যতম উৎস বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া, দক্ষ ও মেধাবী কর্মী খুঁজে পেতেও বেকায়দায় পড়বে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। যা গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ফেলবে।
সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ম্যাথিউ উইলসন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপর বিধিনিষেধ খুব বাজে প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল খাতের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী বিদেশ থেকে আসে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পূর্ণ বেতনের শিক্ষার্থী। তাদের বাদ দিলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাজেটের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতের পরই চীনের অবস্থান। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশটিতে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হন ২ লাখ ৮০ হাজার চীনা শিক্ষার্থী। মার্কিন অর্থনীতিতে তাদের অবদান প্রায় পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এ অবস্থায়, স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা দেয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘চীন ধারাবাহিকভাবে বিশ্বাস করে স্বাভাবিক শিক্ষা সহযোগিতা এবং অ্যাকাডেমিক বিনিময়ে হস্তক্ষেপ করা কারও উচিত নয়। চীনা শিক্ষার্থীসহ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে চীন।’
এখানে ক্ষান্ত হয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। ভবিষ্যতে চীন ও হংকং থেকে আসা সব ধরনের ভিসার আবেদন আরো কঠোরভাবে যাচাইয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, নতুন ভিসানীতি চীনকে নয়, অগ্রাধিকার দেয় যুক্তরাষ্ট্রকে।
বর্তমানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য সংখ্যা ৯ কোটির বেশি। যদিও বেশিরভাগেরই সরকারে কোনো ভূমিকা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সদস্য না হলেও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে চীনা শিক্ষার্থীদের যোগসাজশ থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।