সাত বছর বয়সী মোহাম্মদ হিজাজি। গাজায় ইসরাইলের পড়ে যাওয়া বোমার ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে পৃথিবীর নৃশংসতা এখনও বুঝে উঠতে না পারা এই শিশু। চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে যে চিকিৎসা করাবেন, নেই সেই উপায়ও। কারণ উপত্যকার সব হাসপাতাল প্রায় অকেজো।
চিকিৎসকদের একজন বলেন, ‘সকালবেলা বিস্ফোরণের শব্দ পেলাম। মোহাম্মদকে দেখলাম, কিছু নিয়ে খেলছিল। এটা যে বোমা, ও জানতো না। খেলনা মনে করে খেলতে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে গেল বাচ্চাটা। ওকে বাঁচাতে মিরাকল প্রয়োজন। একটা চোখ আমরা বাঁচাতে পেরেছি। যদি ওকে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারি, আরেকটা চোখও নষ্ট হবে।’
যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই গাজায় আগ্রাসন আরো বাড়িয়েছে ইসরাইল। ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে আইডিএফ। উপত্যকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, রোববার সকালে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফার একটি স্থানে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। মুহূর্তেই ঝরে গেছে অনেক প্রাণ। ত্রাণ নিতেই জীবন বাজি রেখে আসতে হচ্ছে তাদের।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য খাবার নিতে গিয়েছিল আমার ভাই। ইসরাইলের সেনাবাহিনী গুলি করলো। বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে চেষ্টা করছিল ও। কেন ওকে গুলি করলো? কেনই বা বললো সেখানে খাবার আনতে যেতে। এটা তো অপরাধ। ইসরাইল মিথ্যা বলে। তারা বলেছিল, সাধারণ মানুষকে ত্রাণ দেয়া হবে। আমাদের হাতে তো অস্ত্র নেই।’
আরেকজন বলেন, ‘নেতজারিম করিডোরে গিয়েছিলাম। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমার স্বামী আহত হয়ে গেছে। এটাই গাজার বাস্তবতা। আমেরিকার ত্রাণকেন্দ্রে যেতে চাই না। এখানে ত্রাণ নেই, ফাঁদ পাতা। মার্কিনিরা ইসরাইলের চেয়ে কোন অংশে কম না।’
এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা ইস্যুতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করেছে জাতিসংঘ। মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস স্বাধীন তদন্তের দাবি করেছে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের হত্যার ইস্যুতে। তদন্ত হতে হবে গেলো ২৭ মে থেকে প্রতিদিন ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর হামলার।
যদিও ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে আইডিএফ। ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফা বলছে, গেলো এক সপ্তাহে ত্রাণ নিতে আসা ৭৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে আইডিএফ।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ইসরাইল বরাবরই মানবাধিকার ভঙ্গ করছে। গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়া খুব জরুরি। মহাসচিব দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। এই সংঘাতের সমাধান সামরিকভাবে হতে পারে না। দাবি করা হচ্ছে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির। ফিলিস্তিনিরা খাবারের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে।’
সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্ধবিরতি আলোচনার পর পারস্পরিক প্রস্তাবে সম্মতি না জানানোয় আরো পিছিয়ে গেছে আলোচনা। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫০ হাজারের বেশি শিশু আহত আর নিহত হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল-কলেজে তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্র, মসজিদ এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে।
এমন অবস্থায় প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। আগে ফিলিস্তিনের মর্যাদা ছিল ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট।