ভারতের আহমেদাবাদে গতকাল (বৃহস্পতিবার, ১২ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে ১২ ক্রুসহ ২৪২ আরোহী নিয়ে লন্ডনগামী ‘বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার’ মডেলের বিমানটি উড্ডয়নের কিছু সময় পরই বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি প্রায় ৮২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর হুট করেই নিচে নেমে যায় এবং আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির ওপর আছড়ে পড়ে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় আরোহীদের কেউই আর বেঁচে নেই বলে এরইমধ্যে নিশ্চিত করেছে আহমেদাবাদ পুলিশ।
মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং এর দাবি, ৭৮৭ মডেলের ইতিহাসে এটিই প্রথম বিধ্বস্তের ঘটনা। আর তাই স্বাভাবতই বিমানটির যাত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কারিগরি সক্ষমতা নিয়েও এরইমধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিমানের এই মডেলটি বাজারে আসে ২০১১ সালে। এই ১৪ বছরে এক বিলিয়নেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে এই মডেলের বিমান। যা বিরতিহীনভাবে সাড়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বও অতিক্রম করেছে। বর্তমানে এক হাজার ১০০ এর বেশি ড্রিমলাইনার বিশ্বের পাঁচ শতাধিক বিমানবন্দরে ওঠানামা করছে।
যাত্রীবাহী বিমানের মধ্যে সর্বাধিক বিক্রিত বোয়িং ৭৮৭ মডেলটি। এয়ার ইন্ডিয়া বিমান সংস্থার কাছে ৩৪টি ড্রিমলাইনার মডেলের উড়োজাহাজ রয়েছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে ৪১টি বিমান। এমনকি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরেও রয়েছে ছয়টি ড্রিমলাইনার।
বোয়িং ৭৮৭ মডেলের এই বিমানে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বা দুর্ঘটনার পূর্বে ক্রুদের কাছে ডিজিটাল সংকেত পাঠানোর ব্যবস্থা আছে। যা পাইলটদের থ্রি-ডি দৃশ্যমানতা দেয়। প্রশস্ত জানালা ও উন্নত কেবিন ব্যবস্থার কারণে লম্বা দূরত্বের যাত্রাও বেশ আরামদায়ক।
তবে এতকিছুর পরও বৃহস্পতিবারের এই দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের জন্য বড় ধাক্কাই বলা যায়। কেননা একের পর এক বিমান দুর্ঘটনায় গেল কয়েক বছর ধলেই চ্যালেঞ্জের মুখে বোয়িং। এর আগেও নানা যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় বোয়িং এর ড্রিমলাইনার মডেলটি। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির কারণে ২০১৩ সালে বেশ কয়েকটি বিমান বৈদ্যুতিক আগুনের শিকার হয়। এ ছাড়া ব্যাটারির অকার্যকারিতা নিয়ে ২০১৪ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বোয়িং ইঞ্জিনিয়াররা।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দুই হাজারের বেশি ড্রিমলাইনার সরবরাহ বা তৈরির অর্ডার রয়েছে। একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ সিরিজের বিমানের মূল্য প্রায় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার। আহমেদাবাদের এই দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে তাই এই মডেলের উড়োজাহাজের ভবিষ্যৎ নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে বোয়িংয়ের শেয়ারদরও কমেছে আট শতাংশ।