ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা: পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে গড়াতে পারে সংঘাত

ইরানে ইসরাইলের হামলা, ইরানের পতাকা
বিদেশে এখন
0

ইরানের ভূখণ্ডে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলাকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের উসকানি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় সামরিক সক্ষমতায় কে কার চেয়ে এগিয়ে আছে সে প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও এ নিয়ে করছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তেহরান ও তেল আবিবের পদাতিক, নৌ ও বিমান বাহিনীর দক্ষতা, সামরিক খাতে বরাদ্দ, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ পরমাণু অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা নিয়ে চলছে তুলনা।

একদিকে তেহরানকে পরমাণু সমৃদ্ধকরণের মাত্রা কমাতে ক্রমাগত চাপ, অন্যদিক ইসরাইলকে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করতে সবুজ সংকেত দেয়া- ওয়াশিংটনের এই প্যাঁচালো কূটনীতির কারণে একরাতের ব্যবধানে দেশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী হারালো ইরান। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের দাবি ইরানের ভূখণ্ডে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের উসকানি।

আল জাজিরার বিশ্লেষক আলী হাশেম বলেন, ‘ইসমাইল হানিয়া বা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার পর ইরান যে প্রতিশোধ নিয়ে ছিল তা ভিন্ন ঘটনা। কিন্তু আজ ইসরাইল যা করেছে তা সরাসরি যুদ্ধের উসকানি। সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় হামলা, শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যা করা এগুলো সাধারণ ঘটনা না।’

২০২৪ এর অক্টোবরের পর আবারও ইসরাইল-ইরান সরাসরি ঘাত-প্রতিঘাতের পথে হাঁটতে শুরু করায় উভয়পক্ষের সামরিক সক্ষমতার চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের মোট সশস্ত্র যোদ্ধার সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার। এরমধ্যে সাড়ে ৩ লাখ যোদ্ধা আছে সেনাবাহিনীতে আর আইআরজিসির সশস্ত্র যোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার। এছাড়াও প্রায় সাড়ে ৩ লাখ সেনাকে রিজার্ভ অবস্থায় রেখেছে তেহরান।

আরো পড়ুন:

সেই তুলনায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার। এরমধ্যে পদাতিক যোদ্ধা ১ লাখ ১৬ হাজার। ইসরাইলের তুলনায় ইরানের সেনাবাহিনীতে লোকবল বেশি থাকলেও তেল আবিবের রিজার্ভ সৈন্যের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার।

২০২৪ এর এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, ২০২৩ সালে সামরিকখাতে ১০.৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে তেহরান, যা ২০২২ এর তুলনায় ০.৬ শতাংশ বেশি। সেই তুলনায় ২০২৩ সালে সংশ্লিষ্টখাতে ২৭.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে তেল আবিব। যা ২০২২ এর তুলনায় ২৪ গুণ বেশি। এর কারণ অবশ্য ২০২৩ এর অক্টোবরে হামাসের হামলা।

ইরানের সচল ট্যাংকের সংখ্যা ১০ হাজার ৫১৩, আর্টিলারি গান আছে প্রায় ৭ হাজার। ৫০টি হেলিকপ্টার ছাড়াও আছে সাড়ে ৬০০ সাঁজোয়া যান। বিপরীতে ৪০০ ট্যাংক আর সাড়ে ৫০০ আর্টিলারি গান আছে ইজরাইলের। এছাড়াও এয়ার ক্রাফট ও হেলিকপ্টারের সংখ্যা বিবেচনায় তেল আবিবকে টক্কর দিতে পারে তেহরান।

তবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া এই দুই দেশের সক্ষমতা তুলনার অন্যতম প্রধান বিষয় পরমাণু অস্ত্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা বলছে, ইসরায়েলের মজুদে ৯০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তেহরান দাবি করে আসছে, তাদের কাছে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। যদিও তা মানতে নারাজ পশ্চিমা বিশ্লেষকরা।

সেজু