অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রতিনিয়তই বুলেট-বেমা দিয়ে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে নজিরবিহীন পৈশাচিক খেলায় মেতেছে দখলদাররা।
খাদ্য সহায়তাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে, মৃত্যুফাঁদে পরিণত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল পরিচালিত জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রগুলো। যেখানে ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত একমুঠো খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ গেছে প্রায় ৯০০ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনির।
অবরোধের কারণে সহায়তা বোঝাই ট্রাক ঢুকতে না পারায়, দুর্ভিক্ষের নগরীতে রূপ নিয়েছে গাজা উপত্যকা। বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ইসরাইল সীমান্ত বন্ধ করে আমাদের সংকট বাড়িয়ে তুলছে। পাশাপাশি সহায়তাকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করছে।’
আরেকজন বলেন, ‘আমার ছেলে হাসপাতালে, তার জন্য আমি নাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। খাবারের অভাবেই হয়তো মারা যাবো আমরা।’
এ অবস্থায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে এক শিশু অপুষ্টিতে কাতরাচ্ছে। শুধু জুনেই ৫ হাজার ৮০০ এর বেশি শিশুর অপুষ্টি ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ১ হাজারের বেশি শিশুর অবস্থা গুরুতর। অপুষ্টিতে ভুগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অবুঝ শিশুরা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘না খেতে পেয়ে চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু দেখা, একজন ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময়। ইসরাইল ক্রসিং বন্ধ রাখায় শিশুদের জন্য দুধও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পুরো পৃথিবী নীরব। আমরা কি আমাদের শিশুর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করবো?’
অসহায় ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখতে সাগরে মাছ ধরতেও দিচ্ছে না ইসরাইলি বাহিনী। ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে মাছ ধরার নৌযান।
এরমধ্যেও লুকিয়ে লুকিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন অনেক মৎস্যজীবী। অভুক্ত শিশু ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মুখে একটু খাবার তুলে দিতে তাদের এ জীবন বাজি। এ তালিকায় রয়েছে অনেক শিশু-কিশোরও।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘খাবারের অভাবে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। এরমধ্যে সমুদ্রতেও নামতে দেয়া হচ্ছে না। মাছ ধরতে বাধা দিয়ে আমাদের ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।’
অবরোধের কারণে খাদ্য সংকটে আহতদের স্বজনরা মাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। পুষ্টির জন্য মাছের ওপর ভরসা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই, সে পথটাও বন্ধ করেছে। এখন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞায় সত্যিকারের দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন বিষয়ক সংস্থা- আইপিসি এরই মধ্যে সতর্ক করেছে যে, ইসরাইলি আগ্রাসন ও অবরোধ এভাবে অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হবেন প্রায় ২১ লাখ ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ গাজাবাসীর অবস্থা বিপর্যয়কর পর্যায়ে পৌঁছাবে বলেও শঙ্কা করা হচ্ছে।