চার দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত ভারত-পাকিস্তান, কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষিণ কোরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি
পরিবেশ ও জলবায়ু
বিদেশে এখন
0

ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ভারী বৃষ্টিতে একদিনেই মারা গেছেন ৬৩ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাণ গেছে ৪ জনের। ভারতে গঙ্গা ও যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়ায় উত্তর প্রদেশে জারি করা হয়েছে বন্যা সতর্কতা। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস ও নর্থ ক্যারোলাইনায় দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা।

পাকিস্তানের মধ্য-পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশে গত একদিনে ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক। আহত হয়েছেন তিন শ’র বেশি। যা চলতি বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে ভয়াবহ দিনগুলোর একটি। এ নিয়ে জুনের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড়শ। বেশিরভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বাড়ির ছাদ ও দেয়াল ধসে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষদের উদ্ধারের ব্যাপারে সরকার অনেক উদাসীন। প্রতি বছরের মতো এবারও পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ। পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর সরকার বদলে সবই আটকে গেছে। এছাড়া নেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা।’

দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্ষায় কেবল পাঞ্জাবেই মারা গেছেন শতাধিক। আহত প্রায় ৪শ'। এছাড়াও, লাহোর, ফয়সালাবাদ, ওকারা, সাহিওয়ালয়ে আরও বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারের ওপর ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বহু গবাদি পশু।

পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তর বলছে, আবহাওয়ার এ ধারা আরও তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, বেশকিছু নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।

জাতীয় আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র ইসলামাবাদের উপ পরিচালক ফারুক দার বলেন, ‘আগামী তিন দিন একইরকম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে প্রবল ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস আপাতত নেই। সপ্তাহের শেষ দিকে আবারও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়তে পারে বৃষ্টি। যা দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলকে প্রভাবিত করবে।’

ভারতের গঙ্গা ও যমুনার পানি বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে বন্যার আগাম সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ভারতের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে এক মাসেই হিমাচল প্রদেশে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক।

এদিকে, প্রবল বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় দক্ষিণ কোরিয়া বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বন্যা কবলিত অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশের বেশিরভাগ অংশ। রাজধানী সিউলে গত একদিনে ৪ শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে বন্ধ রাখা হয়েছে ৪ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত অবকাঠামো ও স্থাপনা।

দেশটির দক্ষিণের চুংচিয়ং অঞ্চলে পানির নিচে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও যানবাহন। বেশ কয়েকটি অঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভূমিধস। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ঘটনা রোধে আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় সবাইকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা তাদের সব জনবল নিয়ে মাঠে কাজ করবে।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা ও কানসাস অঙ্গরাজ্যে ভারী বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। রাস্তাঘাট তলিয়ে ব্যাঘাত ঘটছে যান চলাচলে। কানসাসে বন্যা কবলিত অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় পুলিশ। নর্থ ক্যারোলাইনায় আকস্মিক বন্যা সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।

একটানা প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নাকাল জনজীবন। এই মৌসুমে কৃষিকাজের জন্য বৃষ্টিপাত অপরিহার্য হলেও, দ্রুত নগরায়ন, দুর্বল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও জলবায়ুর পরিবর্তনে চরম রূপ ধারণ করেছে আবহাওয়া। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাও।

ইএ