বাশার আল আসাদের পতনের পর আহমেদ আল শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে ধীরে ধীরে বৈধতা দিতে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। পশ্চিমা নেতাদের অনেকেই সহনশীল আচরণ শুরু করেন দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা দেশটির নতুন প্রশাসনের সঙ্গে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে সময়ে লাগেনি। একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণের জেরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে দুটি সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্বে প্রাণ গেছে ৬শ'র বেশি মানুষের।
সিরিয়া সীমান্তের সুয়েইদা অঞ্চলে দ্রুজ ও বেদুইন জাতির মধ্যে চলমান এই সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইলও। ইতিহাস বলছে, ইসরাইলের সঙ্গে সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে দ্রুজ জাতির। সম্প্রদায়টির প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বাস দেশটিতে। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ইসরাইলি দ্রুজ আর সিরিয়ার সুয়েইদায় অবস্থানরত দ্রুজ গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। অধিকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় সিরীয় দ্রুজ ও ইসরাইলি দ্রুজ জাতির আসা যাওয়া হয় প্রতিনিয়ত। এই অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ভিত্তিতেই সীমান্তবর্তী সুয়েইদায় পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছিল ইসরাইলের।
সম্প্রতি দ্রুজের সঙ্গে বেদুইন জাতির সংঘাত ও সেখানে সিরীয় সরকারের যোদ্ধাদের অংশগ্রহণ ভাবিয়ে তোলে ইসরাইলকে। দ্রুজ জাতিকে রক্ষার প্রশ্নে সিরীয় সেনাদের ঘাঁটি, গাড়িবহর আর সবশেষ দামেস্কে সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে হামলা চালায় ইসরাইল। এরমাঝেই আসে অস্ত্র বিরতির ঘোষণা। বাধ্য হয়ে সুয়েইদা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে সিরীয় সরকার। কিন্তু বেদুইন কমান্ডার সাফ জানিয়েছেন এই অস্ত্র বিরতির সঙ্গে দ্রুজের সঙ্গে চলমান সংঘাত বন্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। চুক্তি হয়েছে ইসরাইল ও সিরিয়ার মধ্যে।
এই পরিস্থিতিকে মোটেও সন্তোষজনক মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। বরং তারা বলছেন, বেদুইনদের এই মনোভাব সিরিয়ায় আল শারা সরকারের বিরুদ্ধে অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে একতাবদ্ধ করতে সহায়তা করবে। জোরালো হবে সরকার বিরোধী অপতৎপরতা। এমনকি এর জেরে সিরিয়াকে বড় ধরণের যুদ্ধে টেনে আনতে পারে ইসরাইল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাজেদ মাখেইবার বলেন, ‘এই মুহূর্তে সুয়েইদা চলমান সংঘাত বন্ধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অস্ত্র বিরতি যদি ভেস্তে যায় ইসরাইল সিরিয়াকে জোর করে যুদ্ধে টেনে আনবে। পাশাপাশি এই অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য সরকারবিরোধী ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলো সরকারের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে দেশের ঐক্য যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরে বাড়বে বিভাজনও।’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, দীর্ঘদিন একজন একনায়কের শাসনের মধ্যে থেকে সিরিয়ায় গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যে অপশাসনের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছিল, বাশার আল আসাদের পতনের পর ইতিহাস পেছনে ফেলে নতুন এক রেজিমের স্বপ্ন দেখছিলেন সিরীয়রা। কিন্তু সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ও সংগঠনের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর সীমান্তে ইসরাইলি সেনাদের উপস্থিতিতে কিছুটা হলেও মলিন হচ্ছে সিরীয় সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশা। এই উত্তেজনা দমাতে না পারলে ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়েও ভাবতে হবে আল শারা প্রশাসনকে- এমন আশঙ্কার কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা।