আলো-আঁধারির মাঝে কলোসিয়ামের প্রাগৈতিহাসিক করিডোরে হেঁটে দর্শনার্থীরা মুহূর্তের জন্য চলে যাচ্ছেন দুই হাজার বছর আগে। কেউ কেউ চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন গ্ল্যাডিয়েটরদের ব্যবহৃত বর্মে।
‘আ নাইট অ্যাট দ্যা কলোসিয়াম’ নামের এক ঘণ্টার এ প্রদর্শনীতে, সন্ধ্যা নামার পর থেকে গাইডরা ঘুরিয়ে দেখান স্থাপনাটির প্রথম তলা, মাঝের উন্মুক্ত ময়দান আর ভূ-গর্ভস্থ চেম্বার যেখানে এককালে আটকে রাখা হতো গ্ল্যাডিয়েটর আর হিংস্র পশুদের। গোধূলীর আলোতে পশু শিকার আর গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াইসহ কলোসিয়ামের ইতিহাস হয়ে ওঠে আরও রহস্যময়।
দর্শনার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এমন এক সুন্দর পরিবেশ, এখানে পা রাখলেই জীবনীশক্তি ফিরে পাই। জায়গাটা সুন্দর, সত্যি-ই চমৎকার।’
আরেকজন বলেন, ‘আমরা জানতাম দিনের বেলায় অনেক ভিড় থাকবে, আর রাতের মধ্যে পরিবেশ শান্ত হয়ে আসবে। লোকজন কম আর অন্ধকারে এখানে ঘুরে বেড়ানো একটা ভালো অভিজ্ঞতা।’
প্রাচীন রোমান স্থাপত্যকলার অনন্য নিদর্শন কলোসিয়াম, শুরুতে যেটি পরিচিত ছিল ফ্লেভিয়ান অ্যাম্ফিথিয়েটার হিসেবে। রোমান সম্রাট ভেস্পাসিয়ান ও টাইটাসের শাসনামলে নির্মাণকাজ শুরু হয় কলোসিয়ামের, ৭০ থেকে ৭২ খ্রিস্টাব্দে। নির্মাণকাজ শেষে এটি খুলে দেয়া হয় ৮০ খ্রিস্টাব্দে।
প্রাথমিকভাবে গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিযোগিতা, পশু শিকার, প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও বিনোদনধর্মী মক সি ব্যাটলস কী না হতো এই কলোসিয়ামে।
প্রাচীন রোমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ পাবলিক ভেন্যু হালে ইতালির সবচেয়ে দর্শনার্থীপ্রিয় ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর একটি, যেখানে প্রতি বছর পা পড়ে কোটিখানেক মানুষের।
গ্রীষ্মের খরতাপে দিনে পর্যটকদের আনাগোণা কম বলে, রাতে দর্শনার্থীদের জন্য এ আয়োজন। গরম আর ভিড় এড়িয়ে ভিন্ন রূপে কলোসিয়ামের রহস্যে মোড়া সৌন্দর্য্য দেখতে পেয়ে খুশি দর্শনার্থীরাও।
দর্শনার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি এ সময়টা বেছে নিয়েছি কারণ সত্যি ভীষণ গরম পড়েছে। রাতে ভালো লাগে, বেশ শীতল থাকে পরিবেশ। দিনের চেয়ে এই সময়ে সবকিছুই অনেক অনেক আলাদা লাগে।’
আরেকজন বলেন, ‘মাটির নিচে নেমে যাওয়া, কীভাবে এটি সংরক্ষণ করা হয়েছিল এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে কীভাবে এটি খনন করা হয়েছিল, এর ইতিহাস কীভাবে আবিষ্কার হলো ইত্যাদি জানতে পারলাম। সত্যিই অসাধারণ ছিল।’
কলোসিয়ামে রাত্রিকালীন এ আয়োজন চলবে গ্রীষ্মকালজুড়ে।