সীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধ শত বছরের বেশি পুরনো। ফরাসী ঔপনিবেশিকরা কম্বোডিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। দুই দেশের ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থল সীমান্ত নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ায় প্রতিবেশী দুই দেশ।
গত মে মাসে কম্বোডিয়ান এক সেনা নিহতের ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত দুই দেশের সীমান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এতে হতাহত হন বেশ কয়েকজন। সীমান্ত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে দুই দেশের কয়েক লাখ মানুষ।
চলমান সংঘাতে থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব প্রদেশ সুরিনে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। স্থানীয়রা আতঙ্কে আশ্রয় নিয়েছে বাঙ্কারে। প্রাদেশিক থাই চেম্বার অব কমার্সের তথ্য মতে, সুরিনে প্রতি মাসে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য হতো সাড়ে ৯২ মার্কিন ডলারেরও বেশি। বর্তমানে তা স্থবির হয়ে পড়েছে।
সুরিন চেম্বার অর কমার্সের চেয়ারম্যান উইরাত সেত্তাপত্তনাচাই বলেন, সুরিন প্রদেশে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ান সীমান্ত ২৩ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে আছে। এর ফলে স্থবির হয়ে আছে বাণিজ্য। অনেকেই তাদের সমস্ত আয় হারিয়ে ফেলেছেন। সীমান্তবর্তী বেশিরভাগ মানুষ এই ব্যবসার ওপর নির্ভর করে করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন তাদের হাতে কোনো কাজ নেই।
অনেক বাসিন্দার আয়ের একমাত্র উৎস থমকে আছে। সশস্ত্র সংঘাতে বন্ধ হয়ে গেছে সুরিনের সীমান্তবর্তী শহরের ব্যস্ততম ও সবচেয়ে কৌশলগত চেকপয়েন্টগুলো। বাণিজ্য, পর্যটন এবং আন্তঃসীমান্ত জীবিকার এই প্রবেশদ্বারটি এখন পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। চরম আতঙ্কে দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে স্থানীয়রা। সীমান্ত এলাকা এখন জনশূন্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত ৪ থেকে ৫ দিন ধরে আমরা বাঙ্কারের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছি। খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। আমরা খাবারও সংগ্রহ করতে পারছি না।
চলমান উত্তেজনায় চরম ঝুঁকিতে আছে সুরিন প্রদেশ। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের পাশাপাশি স্থবির হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী মানুষের জনজীবন। আতঙ্ক বিরাজ করলেও, কিছু বাসিন্দা নিজের আবাসস্থল ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, আমার বাড়ির পাশেই বিস্ফোরণ হয়েছে। বাড়ির নারী ও শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। বাড়ির দেখাশোনা করার জন্য আমি এখানে থেকে গেছি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এরইমধ্যে বড় ধরনের ক্ষতি মুখে পড়েছে দুই দেশ। উভয় পক্ষই বলেছে, তারা আত্মরক্ষার্থে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। দুই দেশের সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ।