গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়ে আবারও ইসরাইলের হামলা, নিহত ৬৩

গাজায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে
বিদেশে এখন
0

গাজায় ১০ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি আর ত্রাণ প্রবেশের অনুমতির একদিন যেতে না যেতেই ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ গেছে ৬৩ ফিলিস্তিনির। এরমধ্যে ৩৪ জনই ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে মৃত্যুও থামেনি। না খেয়ে নতুন করে মারা গেছেন দুই শিশুসহ ৬ ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে গাজাবাসীর জন্য স্থলপথের পাশাপাশি আকাশ থেকেও ফেলা হচ্ছে ত্রাণ। এদিকে এক বস্তা ত্রাণ আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে গাজার ঘরে ঘরে।

গাজার ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ। ক্ষুধা আর অপুষ্টি নিয়ে পরিবার নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন গাজার প্রায় প্রতিটি মানুষ। সেই ঘরে প্রাণের সঞ্চার করেছে ত্রাণের বস্তা।

স্থানীয়রা বলেন, প্রায় ৪০ দিনের বেশি ঘরে কোট আটা ছিলো না। প্রতিদিনই আটার সংগ্রহে বের হতাম। কিন্তু হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতাম। আল্লাহর রহমতে আজ পেয়েছি।

রোববার (২৭ জুলাই) থেকে আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে গাজাবাসীর জন্য। দীর্ঘ দিন পর অসহায় ফিলিস্তিনিদের কাঁধে উঠলো ত্রাণের বস্তা । অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা ক্লান্ত শরীরে পরিবারের জন্য একটি বস্তা বয়ে নিতে কষ্ট হলেও, অবশেষে খাবার মিলেছে এই ভেবে খুশি তারা।

বাসিন্দারা বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় অনেক কষ্ট পাচ্ছিলাম। সন্তানদের ওজন কমে গেছে। আল্লাহ সহায় হয়েছেন। তার দয়ায় আজ খাবার পেয়েছি।

কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন ফিলিস্তিনিরা। কোন ধরণের যানবাহন না থাকায় কাঁধে করেই সবাইকে বস্তা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়।

আন্তর্জাতিক চাপে রোববার ভোর থেকেই গাজায় ত্রাণ দেয়া শুরু করেছে ইসরাইল। এয়ারক্রাফটে করে বস্তায় বস্তায় ত্রাণ ফেলছে তারা। ইসরাইল ছাড়াও জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও বিমানে করে গাজাবাসীর জন্য ২৫ টন খাবার ফেলেছে। এছাড়া মিশর সীমান্ত দিয়েও ট্রাকে করে ত্রাণ প্রবেশ করেছে সেখানে।

যদিও জাতিসংঘ বলছে, গাজাবাসীর জন্য এই ত্রাণ যথেষ্ট নয়। গাজায় প্রতি মাসে শিশুদের জন্য প্রায় আড়াই লাখ ক্যান ফর্মুলা দুধ দরকার। সহায়তা সংস্থাগুলো, বলছে ২০ লাখ ফিলিস্তিনির শুধুমাত্র একবেলা খাবারের জন্য কমপক্ষে ১৬০টি বিমান বাহিনীর ফ্লাইট প্রয়োজন।

রোববার মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যে গাজার মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা আগ্রাসন বন্ধের ঘোষণা দেয় তেল আবিব। এমনকি খাদ্য মেডিকেল সহায়তার জন্য সকাল ৬ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত মানবিক করিডোর খুলে দেয়ারও ঘোষণা দেয় তারা।

এদিকে ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে ধুকতে থাকা গাজাবাসীর ওপর হামলা থামছে না ইসরাইলি বাহিনীর। রোববারও বিমান হামলায় প্রাণ যায় অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনির। আহত হন অনেকে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি হামলা ছাড়াও ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে মৃত্যু হয়েছে আরও ৬ ফিলিস্তিনির যার মধ্যে ২ জন শিশুও রয়েছে। খাবারের অভাবে গাজার নাসের হাসপাতালে জায়নাব নামে ৫ মাসের একটি শিশুরও করুণ মৃত্যু হয়েছে। শিশুটি যে ওজন নিয়ে জন্মেছিলো তার চেয়েও কম ওজনে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো। যা দেখে বাকরুদ্ধ বিশ্ববাসী।

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, তিন ভাগের এক ভাগ গাজাবাসী অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৫ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিতে রয়েছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজার প্রায় ২০ শতাংশ গর্ভবতী ও ব্রেস্টফিডিং মা অপুষ্টিতে ভুগছে।

যদিও জাতিসংঘসহ মানবাধিকার এসব সংস্থার সব তথ্যকে মিথ্যা দাবি করলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তার মতে, গাজায় কোন ক্ষুধার্ত মানুষ নেই। যুদ্ধ শুরুর পরও টনের পর টন সহায়তা পাঠিয়ে গাজাবাসীকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতনিয়াহু বলেন, গাজায় কোন ক্ষুধার্ত মানুষ নেই। ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চলছে। পুরো যুদ্ধের সময়ে গাজায় সহায়তা দেয়া অব্যাহত রেখেছি। অন্যথায় গাজায় কোন ফিলিস্তিনি প্রাণে বেঁচে থাকার কথা না।

সহায়তা অব্যাহত থাকলেও হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতনিয়াহু বলেন, যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। লক্ষে পৌঁছানো না পর্যন্ত যুদ্ধ থামাবো না। আমরা পুরোপুরি জয় চাই।

এদিকে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফিলিস্তিনিদের ক্ষুধার্ত ও অবরুদ্ধ রেখে ইসরাইলের সঙ্গে কোন যুদ্ধবিরতির আলোচনা হতে পারে না।

হামাস প্রধান খালিন আল-হায়া বলেন, গাজা উপত্যকায় যখন নারী-শিশুসহ লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে দুর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলের সঙ্গে কোন যুদ্ধবিরতি আলোচনা হতে পারে না।

এদিকে গাজা ইস্যুতে নেতানিয়াহুকে পরবর্তী সিদ্বান্ত নেয়ার কথা বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে ইসরাইল ফিরে আসলে গাজার কী পরিণতি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন তিনি। ট্যারিফ ইস্যুতে ইউরোপীয় কমিশনার উরসুলা ভন দেইর লায়েনের সঙ্গে বৈঠকর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, কী হতে যাচ্ছে আমি জানি না। হামাসকে শুধু এতটুকু বলতে চাই, কী পরিণতি অপেক্ষা করছে বলা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ জিম্মিকে আমরা ফিরিয়ে নিয়েছি। কয়েকটি মরদেহ আর কিছু সংখ্যক বন্দি তাদের কাছে রয়েছে। জীবিত বন্দিদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই।

একইদিন গাজাবাসীর জন্য ৬ কোটি ডলার সহায়তা পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে আক্ষেপ জানান তার এই প্রতিদান কেউ স্বীকার করছে না।

ইএ