গাজায় সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ, ১০০টির বেশি এনজিওর যৌথ বিবৃতি

গাজায় সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ
বিদেশে এখন
0

গাজায় সাংবাদিক হত্যা ও বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশে ইসরাইলি বাধার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে বিক্ষোভ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও চাইছেন, গাজায় বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশে অনুমতি দেয়া হোক। এদিকে গাজায় ত্রাণ ঢুকতে বাধা দেয়ায় ইসরাইলের প্রতি নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বিশ্বের ১০০টিরও এনজিও। আর অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদারিত্বের নতুন পদক্ষেপ দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে দূরে ঠেলে দেবে বলে মনে করছেনে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা ও অনাহার-অপুষ্টিতে ধুঁকতে থাকা অসহায় ফিলিস্তিনিদের করুণ পরিণতির দৃশ্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরায়, সম্প্রতি আনাস আল শরীফসহ আল-জাজিরার ৬ সাংবাদিক হত্যা করেছ নেতানিয়াহুর সেনারা। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩৮ সাংবাদিককে হত্যা করেছে বলে তথ্য দিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার মিডিয়া কার্যালয়। সব মিলিয়ে গাজায় সাংবাদিক হত্যার বিশ্বজুড়ে ফুঁসে ওঠছে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ।

আগ্রাসন শুরু পর থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় ঢুকতে অনুমতি না দেয়ায়ও জোরালে হচ্ছে বিক্ষোভ। এ অবস্থায় হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুখোমুখি হলেন ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসময় গাজায় বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমিও চাই এটা হোক। সাংবাদিকরা প্রবেশের অনুমতি পেলে আমার খুব ভালো লাগবে।’

এরইমধ্যে প্রতিদিনই সাহায্য আনতে যাওয়া ক্ষুধার্ত গাজাবাসীদের হত্যা করছে ইসরাইলি বাহিনী। তাদের গুলিতে বৃহস্পতিবার ১৩ জন ত্রাণ প্রার্থীসহ ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া একই সময় অনাহার- অপুষ্টিতে মারা গেছে আরও ৪জন। এনিয়ে ইসরাইলি অবরোধে অনাহারে মারা যাওয়া ফিলিস্তিনির সংখ্যা প্রায় ২৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। যাদের মধ্যে শতাধিকই শিশু। সব মিলিয়ে গাজায় মোট প্রাণহানি ৬১ হাজার ৭শ' ছাড়িয়েছে।

এরমধ্যে আরও ভয়ংকর তথ্য তুলে ধরেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, অপুষ্টির মাত্রা এতোটাই বেড়েছে যে, শুধু জুলাইয়ে প্রায় ১৩ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তাদের মধ্যে চরম অপুষ্টিতে ভুগছে ২ হাজার ৮০০ শিশু। এমন সংকটের মধ্যেই ইসরাইলি বাধায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি- (ডব্লিউএফপি)।

আরও পড়ুন:

এমন পরিস্থিতিতে গাজায় ত্রাণ ঢুকতে বাধা দেয়ায় ইসরাইলি সরকারের কঠোর নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বিশ্বের ১০০টিরও এনজিও। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু জুলাই মাসে গাজায় সহায়তা সামগ্রী পৌঁছে দিতে বেশ কয়েকটি এনজিওর ৬০টিরও বেশি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। এরমধ্যে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত অক্সফাম কর্তৃক সংগৃহীত ২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সাহায্য সামগ্রী অন্যতম।

এদিকে ইসরাইলের অতি ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ই-ওয়ান এলাকায় ৩হাজারের বেশি বাড়ি নির্মাণে অনুমোদন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দার ঝড় বইছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন যে, ইসরাইলে এ পদক্ষেপ দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে শেষ করে দেবে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপন এবং বসতি স্থাপনের সাথে জড়িত সরকার আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এটি স্পষ্টতই, দখলকে আরও দৃঢ় করে। যা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও দূরে ঠেলে দেয়। তাই আমরা ইসরাইলি সরকারকে এটি না করার আহ্বান জানাই।’

যদিও গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের সময় থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব বাড়িয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণে অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রায় সাড়ে ৬শ’ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ১২১ জনই শিশু।

ইএ